অনুবাদ-চর্চা

চলিয়াছিল; অবশেষে আরবেরা উভয়ের নিকট হইতে ইহা জিতিয়া লয়।” ঐ গ্রন্থকারই দেখাইয়া দিয়াছেন যে, নবম খৃষ্টশতাব্দীতে হারুনঅল্‌রশীদকে ইজিপ্ট যত বেশি খাজনা দিত, উত্তর মেসোপোটেমিয়া তত বেশি খাজনাই দিত এবং সেখানকার তুলা পৃথিবীর সকল হাটে প্রাধান্য লাভ করিয়াছিল। ইহা সুবিদিত যে আমাদের মস্‌লিন শব্দ উত্তর মেসোপোটেমিয়ার মোসল নগরের নাম হইতে উদ্ভূত।

২৫

এই ভূমি দশ শতাব্দী পূর্ব্বে যেরূপ শস্য উৎপাদন করিয়াছে এখন সেরূপ না করিবে কেন? মাটি এবং আবহাওয়ার পরিবর্ত্তন ঘটে নাই। বৃষ্টিপাত এবং সেচনযোগ্য জল পুরাতন কালের মতোই প্রচুর আছে। তখন যে জনসমূহ দেশে বাস করিত এখনও তাহারাই বাস করে; ইহারাও তাহাদের মতো শ্রমশীল এবং মিতব্যয়ী। প্রাচ্যদেশের সুন্দরতম শস্যভূমিতে গত চারি শতাব্দী কেন এমন সর্ব্বনাশ আনয়ন করিল? উত্তর হইতে দক্ষিণ, পূর্ব্ব হইতে পশ্চিম, সর্ব্বত্রই এই দেশে চাষীর মহা সুযোগ; অথচ এই ভূমির অধিকাংশই অনাবাদী অবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। জলসংগ্রহের জন্য জলাশয় এবং অন্য যে সকল সেচনব্যবস্থার উপকরণ এই মরুময় একরগুলিকে শস্যপ্রসূ ক্ষেত্রে পরিণত করিতে পারিত তাহা নির্ম্মিত হয় নাই। অত্যন্ত-আদিমকাল-প্রচলিত কৃষিপ্রণালী এখনও এখানে ব্যবহৃত হয়; বাইবেল-কথিত কালের সেই বলদবাহিত লাঙল, সেই কাস্তে দিয়া বড়ো বড়ো খেতের ফসল কাটা, সেই ফসল মাড়াই করিবার মেঝে যেখানে পশুদের খুরের দ্বারা গোধূম দলিত হয়, সেই ক্লেশদায়ক মন্থরগতি হাতের খাটুনি –সেও এমনতরো অনিপুণ যন্ত্র-সহযোগে যে যন্ত্রে প্রয়াসপ্রয়োগের অনুপাতে ফললাভ সর্ব্বাপেক্ষা স্বল্প।

২৬

মেরুপ্রদেশের চুক্‌চিস্‌গণ যদিও প্রকৃতির শিশু এবং সভ্যতার সকলপ্রকার প্রভাব হইতে সম্পূর্ণ মুক্তভাবে বরফ তুষার এবং শীতের মধ্যে বর্দ্ধিত, তথাপি তাহারা ভালোমানুষ, অবজ্ঞকস্বভাব এবং আতিথ্যপরায়ণ। যদিও দীর্ঘ শীতকাল ধরিয়া প্রত্যহই অন্তত কুড়ি জন করিয়া মেরুবাসী ভেগা জাহাজ দেখিতে আসিত, কিন্তু দুই তিনবার-মাত্র তাহারা অসদুপায়ে কিছু আত্মসাৎ করিবার অপরাধে ধরা পড়িয়াছিল এবং ঐ চৌর্য্যগুলিও অতিসামান্য প্রকারের। চুক্‌চিস্‌গণ খর্ব্বকায় জাতি, যদিও তাহাদের মধ্যেও অতিকায় মানুষ দেখা যায়; যেমন আমরা একটি স্ত্রীলোককে দেখিয়াছিলাম, সে লম্বায় ছয় ফুট তিন ইঞ্চি। তাহাদের দেহের বর্ণ অনুজ্জ্বল পীত, পুরুষদের রঙ সাধারণত মেয়েদের চেয়ে আরো কিছু ঘোর। মাঝে মাঝে উত্তর য়ুরোপের অধিবাসীদিগের ন্যায় স্বচ্ছ ও গৌরবর্ণ দেখিতে পাওয়া যায়, বিশেষত স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে।

২৭

তাহাদের চক্ষু কৃষ্ণবর্ণ এবং অনেক সময় চীনদেশীয়দিগের ন্যায় তির্য্যগ্‌ভাবে সন্নিবিষ্ট। তাহাদের কেশ অঙ্গারকৃষ্ণ; পুরুষেরা উহা খুব ছোটো করিয়া কাটিয়া রাখে; স্ত্রীলোকেরা উহা যথেচ্ছ বাড়িতে দেয় এবং কপালের মাঝখানে সিঁথি কাটিয়া বারো হইতে আঠারো ইঞ্চি লম্বা বিনানী রাখে, তাহা দুই কানের কাছ দিয়া ঝুলিয়া থাকে। মেরু-অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য সীলের মাংস ও চর্ব্বি; তদুপরি যখন পক্ষী ভালুক ও বল্‌গা হরিণ পাওয়া যায় তখন তাহারও মাংস ব্যবহার করে। সমুদ্র-তীরজাত কোনো কোনো উদ্ভিদের মূল, উইলো গাছের পাতা প্রভৃতিও যথেষ্ট প্রচুর পরিমাণে তাহাদের খাদ্যশ্রেণীভুক্ত। পাতাগুলি গ্রীষ্মকালের শেষভাগে সংগ্রহ করা হয় এবং শীতকালে আহার করা হয়।

২৮

শীতকালে যখন অন্য খাদ্য শেষ হইয়া আসে, তখন গ্রীষ্মকালে যেসকল সীল ও সিন্ধুঘোটক ধরা হইয়াছিল তাহাদের অস্থি চূর্ণ করিয়া তাহার দ্বারা ঝোল প্রস্তুত হয়, উহা মানুষ ও কুকুর উভয়েই আহার করে। ঐ শেষোক্ত প্রাণী প্রতি গ্রামেই