রাজা
          যেখানে   ঝগড়া করে ঝগড়াটে।
যেখানে   ভোলাভুলি খোলাখুলি
          সেখানে   তোমার মতন খোলা কে—   ঠাকুরদাদা!

ঠাকুরদা। যদি তোরা তোদের সেই কবির কাছে বিধান নিতিস তা হলে শুনতে পেতিস, এই ফাল্গুন মাসের দিনে ঠাকুরদা প্রভৃতি পুরোনো জিনিস মাত্রই একেবারে বর্জনীয়। আমার নামে গান বেঁধে আজ রাগ-রাগিণীর অপব্যয় করিস নে, তোরা সরস্বতীর বীণার তারে মরচে ধরিয়ে দিবি যে।

দ্বিতীয়। ঠাকুরদা, তুমি তো রাস্তাতেই সভা জমালে, উৎসবে যাবে কখন। চলো আমাদের দক্ষিণ-বনে।

ঠাকুরদা। ভাই, আমার ঐ দশা, আমি রাস্তা থেকেই চাখতে চাখতে চলি, তার পরে ভোজটা তো আছেই। আদাবন্তে চ মধ্যে চ।

দ্বিতীয়। দেখো দাদা, আজকের দিনে মনে একটা কথা বড়ো লাগছে।

ঠাকুরদা। কী বল্‌ দেখি।

দ্বিতীয়। এবার দেশবিদেশের লোক এসেছে। সবাই বলছে, সবই দেখছি ভালো, কিন্তু রাজা দেখি নে কেন। কাউকে জবাব দিতে পারি নে। আমাদের দেশে ঐটে একটা বড়ো ফাঁকা রয়ে গেছে।

ঠাকুরদা। ফাঁকা! আমাদের দেশে রাজা এক জায়গায় দেখা দেয় না বলেই তো সমস্ত রাজ্যটা একেবারে রাজায় ঠাসা হয়ে রয়েছে— তাকে বল ফাঁকা! সে যে আমাদের সবাইকেই রাজা করে দিয়েছে! এই-যে অন্য রাজাগুলো, তারা তো উৎসবটাকে দ’লে ম’লে ছারখার করে দিলে— তাদের হাতি-ঘোড়া লোক-লশকরের তাড়ায় দক্ষিণ-হাওয়ার দাক্ষিণ্য আর রইল না, বসন্তর যেন দম আটকাবার জো হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাজা নিজে জায়গা জোড়ে না, সবাইকে জায়গা ছেড়ে দেয় কবিকেশরীর সেই গানটা তো জানিস।

গান
আমরা   সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে,
          নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে।—
                    আমরা সবাই রাজা।
            আমরা   যা খুশি তাই করি,
            তবু    তাঁর খুশিতেই চরি,
আমরা   নই বাঁধা নই দাসের রাজার ত্রাসের দাসত্বে,
          নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে—
                    আমরা সবাই রাজা।
            রাজা   সবারে দেন মান,
            সে মান   আপনি ফিরে পান,
মোদের   খাটো করে রাখে নি কেউ কোনো অসত্যে,
          নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে।—