প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
৭১
পীত নদীর তীরবর্ত্তী হোনান শান্টুং এবং শান্সিতে যাহাদের আদি বাসস্থান সেই উত্তরদেশীয় চৈনিকেরা ক্কান্টুং এবং ফুকিয়েন-নিবাসী দক্ষিণচৈনিকদের হইতে সম্পূর্ণ পৃথক্ জীব। উত্তরদেশীয়েরা সাধারণত বৃহদায়তন; ইহারা সকল ঘটনাই অবিচলিতভাবে গ্রহণ করে, এবং গার্হস্থ্য কিম্বা রাষ্ট্র-সম্বন্ধীয় কোনো বাঁধা নিয়মের পরিবর্ত্তনের বিরোধী। দক্ষিণদেশীয়েরা সাধারণত আয়তনে খাটো, উত্তরের লোকদের চেয়ে তাহাদের বর্ণ কালো, এবং তাহারা সহজে উদ্বেজিত হয়। ইহারা পুরাতন প্রথা-সম্বন্ধে অসহিষ্ণু এবং তাহাদের উদীচ্য স্বজাতীয়েরা যে সতর্ক গণ্ডির মধ্যে সন্তুষ্ট ইহারা তাহা ভেদ করিয়া আপনাদিগকে অভিব্যক্ত করিয়া তুলিতে চেষ্টা করিতেছে।
৭২
এ দিকে আহার সম্বন্ধে ইহাদের উভয়ের রুচি স্পষ্টতই পৃথক্। উত্তরচৈনিকেরা প্রবল-শীতপ্রধানেদেশীয় লোক, এই জন্য যে তণ্ডুল দক্ষিণদেশীয়দের পক্ষে অত্যাবশ্যক তাহাকে তাহারা উপেক্ষা করে এবং ময়দা ও গোধূমজাত অন্যান্য পদার্থ খাইয়াই প্রধানত বাঁচিয়া থাকে। দক্ষিণদেশীয়দের দেশ এত গরম যে, গুরুপাক খাদ্যে তাহাদের বিতৃষ্ণা; তাহারা ভুট্টা এবং স্নিগ্ধকর শাক-সবজি কিছুতেই ছাড়িতে চায় না। কিন্তু দক্ষিণদেশীয়দের প্রতি উত্তরদেশীয়দের ঈর্ষাই বিরোধের সকলের চেয়ে প্রধান কারণ। দক্ষিণ প্রদেশগুলি অপেক্ষাকৃত অধিক পরিমাণে আধুনিক অবস্থার সংস্পর্শে আনীত হইয়াছে এবং এই জন্য যে যথেচ্ছচারী শাসন উদীচ্যদের প্রায় প্রকৃতিগত, তাহার বিরুদ্ধে ইহারা উদ্বেজিত হইয়া উঠে।
৭৩
দক্ষিণদেশীয়েরা বাণিজ্যে তাহাদের চেষ্টা সন্নিবিষ্ট করিয়া ধনী হইয়া উঠিয়াছে, তাহারা বিদেশে ভ্রমণ করিয়া তাহাদের উদীচ্য প্রতিবেশীদের চেয়ে অধিকতর আধুনিক ভাবাপন্ন হইয়াছে, এভং উত্তরদেশীয় যে স্বৈরশাসকগণ তাহাদের আকাঙ্ক্ষা-সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ ও সংশয়পর তাহাদের কর্ত্তৃক উত্তরের রাজধানী হইতে শাসিত হওয়া, ইহারা ঘৃণার সহিত দেখে। তাহা ছাড়া, তাহারা চারি দিকে তাকাইলে দেখিতে পায় যে, উত্তর প্রদেশে প্রভূত পরিমাণে রেলোয়ে পাতা হইয়াছে, অথচ যে দক্ষিণ প্রদেশ সর্ব্বাপেক্ষা বহুপ্রসূ সেখানে রেলোয়ে অল্প এবং বাণিজ্যব্যবসা সেকেলে বহুশ্রমসাধ্য এবং যাতায়াতের অব্যবস্থাবশত প্রতিহত।
৭৪
একদিন এরূপ ঘটিল যে, প্রায় মধ্যাহ্নকালে আমার নৌকার অভিমুখে যাইতে যাইতে সাগরতটে একটি মানুষের নগ্নপদের চিহ্নে আমি অতিমাত্র বিস্মিত হইয়া উঠিলাম; এই চিহ্ন বালুকার উপর অত্যন্ত স্পষ্ট দৃশ্যমান ছিল। বজ্রাহতের মতো অথবা যেন কোন প্রেতমূর্ত্তি দেখিয়াছি এমনি ভাবে দাঁড়াইলাম। আমি কান পাতিলাম, আমার চারি দিকে তাকাইলাম, কিছু শুনিতে পাইলাম না অথবা দেখিতেও পাইলাম না। আরো অধিক দূর দেখিবার জন্য ক্রমোচ্চ ভূমির উপরে উঠিয়া গেলাম। আমি তটের এক দিকে চলিয়া গেলাম আবার বিপরীত দিকে চলিয়া আসিলাম, কিন্তু সবই সমান; সেই একটি ছাড়া অন্য কোনো চিহ্ন দেখিতে পাইলাম না। আরো অধিক চিহ্ন আছে কিনা দেখিবার জন্য এবং ইহা আমার কল্পনা হইতে পারে কিনা তাহা অবধারণের জন্য পুনর্ব্বার ইহার কাছে গেলাম; কিন্তু এরূপ সন্দেহের কোনো কারণ ছিল না, কেন না সেখানে ঠিক কেবল একটি পায়েরই ছাপ ছিল–পদাঙ্গুলি গোড়ালি এবং একটি পায়ের প্রত্যেক অংশের ছাপ। ইহা কী করিয়া সেখানে আসিল তাহা বুঝিলাম না অথবা লেশমাত্র কল্পনা করিতে পারিলাম না।