অনুবাদ-চর্চা

৯৬

তাহাদিগকে যে মারা হইবে সে তিনি সহিতে পারেন নাই; এই জন্য তাহাদিগকে লইয়া গিয়া তাঁহার বন্ধুদের মধ্যে এখানে একটি সেখানে একটি করিয়া বিতরণ করিলেন; কেন না তিনি জানিতেন হাঁসগুলিকে তাঁহারা ভালো করিয়া রাখিবেন এবং মারিবেন না। যখন তাঁহার স্বামীর প্রাতরাশের জন্য মুর্গি মারিতে হুকুম করিতে হইত তখন এই মহিলা ভয়ঙ্কর কষ্ট পাইতেন। আমি দেখিয়াছি পাচককে মুর্গি মারিতে বলিয়া তিনি দৌড়িয়া বারান্দায় গিয়া কানে হাত দিয়া বসিতেন-ভেয়, পাছে তাহার চীৎকার তিনি শুনিতে পান।

৯৭

পর্য্যবেক্ষণের দ্বারা যতগুলি নিশ্চিততম তথ্য জানা গিয়াছে তাহারই মধ্যে একটি এই যে, পৃথিবীর কঠিন আবরণটি স্থিতিস্থাপক-প্রকৃতির। হ্রাসবৃদ্ধিশীল চাপের ক্রিয়াধীনে বৃহৎ ভূখণ্ডসকল উঠে এবং পড়ে। এই জন্য এ কথা অনুমান করা সঙ্গত যে, সুদূর কালে মহাদেশব্যাপী দুই এক মাইল গভীর প্রকাণ্ড হিমসংহতির সঞ্চয় এমন চাপ দিয়াছে যে, তদ্বারা অধিকৃত বৃহৎ ভূখণ্ডে অধঃসরণ ঘটিয়াছে। অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে উত্তর মার্কিন মহাদেশের উত্তর-পূর্ব্ব অংশে ভূমির সুস্পষ্ট এবং সুপ্রত্যক্ষ উন্নয়নই এই কথাকে যেন সমর্থন করে। এইচ. এল. ফেয়ার্‌চাইল্‌ড্‌ “সায়ান্স্‌” পত্রে লিখিবার কালে বলিয়াছেন, সর্ব্বাপেক্ষা আধুনিক কালে মার্কিন দেশীয় তুষারাচ্ছাদনে যে ভূখণ্ড আবৃত হইয়াছিল সেই ভূখণ্ড তাহার বর্ত্তমান প্রতিষ্ঠা-স্থানের অনেক নীচে অবস্থিত ছিল, এমন সময়ে বরফের চাদর গলিয়া গেলে মৃদুমন্দ উত্থানক্রিয়ায় ইহা বর্ত্তমান উচ্চতায় আনীত হইয়াছে।

৯৮

ফরাসী সৈন্য কেবল দেশ, তাহার নগর, তাহার কৃষিক্ষেত্র, তাহার গৃহ ছাড়া আর কিছুর জন্য যে লড়িতেছে এমন কোনো নিদর্শন সে কখনো দেয় নাই। যে যুদ্ধলালসার চরম লক্ষ্য যুদ্ধ করা তাহার দ্বারা সে কখনো অভিভূত হয় না। এই যুদ্ধ অমঙ্গলরূপে উপদ্রবরূপে তাহার প্রিয় স্বদেশকে ধ্বংস করিতেছে ইহাই সে জানে; এবং এই মহামারী হইতে পৃথিবীকে মুক্ত করাই সে তাহার পিতৃপুরুষদের প্রতি, নিজের প্রতি এবং নিজের সন্তানদের প্রতি কর্ত্তব্য বলিয়া অনুভব করে। যুদ্ধ যে কত দূর যুক্তিবিরুদ্ধ মূঢ়োচিত এবং বর্ব্বর তাহা ব্যাখ্যা করিবার জন্য উৎকর্ষবান ফরাসী বিশেষ যত্নশীল, অথচ দেখিবে এই উৎকর্ষবান ফরাসীই তাঁহার মাতৃভূমির সৈনিকবেশ পরিধান করিয়া রণমত্ত ভৈরবের মতো কলের কামানের মুখে ধাবিত হইতেছেন।

৯৯

জাপানের বর্ত্তমানকালীন অবস্থার কঠোরতম বিচারকদের মধ্যে অধ্যাপক হাকুসন কুরিয়াগাওয়া একজন; তিনি ওসাকা মাইনিচি পত্রে ইহাই বলিতে চান যে, রাষ্ট্রনীতি এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে এবং ন্যাশনাল জীবনের প্রায় প্রত্যেক বিভাগে জাপান প্রহসন অভিনয় করিতেছে। তাঁহার নালিস এই–রাষ্ট্রনীতিতে অধিকাংশ জাপানী আধুনিক কালের দুই শতাব্দী পিছনে আছে। তিনি বলেন–পাশ্চাত্য প্রতিষ্ঠানগুলি গ্রহণ করিবার কালে তাহাদের অন্তঃস্থিত সারতত্ত্বটি বাদ দেওয়া হইয়াছে। ধার-করা প্রতিষ্ঠানগুলির উৎকর্ষসাধনের জন্য জাপান যত্নের ত্রুটি করে না, কিন্তু তাঁহার মতে জীবনের বুদ্ধিগত দিক এবং আধ্যাত্মিক দিকের চর্চ্চা সে উপেক্ষা করে। যে জাপানী জাতি ধনের প্রতি বিদ্বেষবান বলিয়া আখ্যাত, সে কি তলে তলে সকলের চেয়ে ধনের প্রতি আসক্ত নয়?

১০০

১৬১০ খ্রীষ্টাব্দে Galileo ভেনিসের সেন্ট্‌ মার্কের গির্জ্জার উচ্চ ঘন্টামন্দিরের (Campanile) উপর আরোহণ করিয়া সমাগত অভিজাতবর্গ ও সেনেটর্‌দিগকে আপন নব-উদ্ভাবিত দূরবীক্ষণেযাগে দেখাইলেন যে, শুক্রগ্রহ কলাবিশিষ্ট, চন্দ্রে উচ্চ পর্ব্বতসকল আছে, তাহারা চন্দ্রের বক্ষে কৃষ্ণবর্ণ ছায়াপাত করে, কৃত্তিকা-নামক তারকাগুচ্ছে–সাতটি নহে–ছত্রিশটি তারা আছে এবং ছায়াপথ তারকায় রেণুময়।