অনুবাদ-চর্চা

১৬৩

তোমাকে আমার লিখিবার উদ্দেশ্য এই যে, বাংলা দেশের পক্ষে যে জ্ঞানের এত বেশি প্রয়োজন যাহাতে সেই জ্ঞান বিস্তার করিবার শ্রেষ্ঠ উপায়-সম্বন্ধে স্যানিটারী বোর্ডের উপদেশ সংগ্রহ করা হয়। এই ব্যাধি সম্বন্ধে আমাদের বর্ত্তমান অভিজ্ঞতা হইতে দুইটি কথা সুস্পষ্ট প্রকাশিত হইয়াছে-প্রেথম, যে, ইহা অত্যন্ত দূরবিস্তৃত, এবং দ্বিতীয়, যে, ইহা সহজেই সারিয়া যায়। কিন্তু যদি বা এই পরাশিত কীট মনুষ্যের দেহতন্ত্র হইতে বিনাক্লেশে তাড়িত হয় তথাপি ইহার পুনঃসংক্রমণ নিষেধ করা এক সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ব্যাপার। এবং সেই পুনঃসংক্রমণ হইতে নিরাপদ হওয়া কেবলমাত্র জনগণের স্বাস্থ্যপালন-সম্বন্ধীয় অভ্যাসসকলের পরিবর্ত্তন-দ্বারাই ঘটিতে পারে। অতএব এইরূপ যেন বোধ হইতেছে যে, এই পরাশিত কীটের সম্পূর্ণ উচ্ছেদ-সাধনের চেষ্টার সময় এখনো আসে নাই। কিন্তু যাবৎ বর্ত্তমানে অঙ্কুশকৃমির বিরুদ্ধে নিঃশেষকারী যুদ্ধ চালনা করা সাধ্য না হয় তাবৎ আমার এই বোধ হয় যে, সংগ্রামের একটা প্রথম উপক্রম হাতে লওয়া বেশ চলে।

১৬৪

উপসংহারে আমি বলি যে, এক্ষণে এ সম্বন্ধে আমাদের যতটা জ্ঞান আছে তাহাতে নিম্নলিখিত প্রতিজ্ঞাগুলিকে স্থাপিত করা আমাদের পক্ষে অন্যায় নহে যে–(১)বাংলার জনসংখ্যার বৃহদংশ, সম্ভবতঃ শতকরা আশি ভাগ, যাহাতে মোটের উপরে প্রায় তিন কোটি ষাট লক্ষ লোক বুঝায়, এই অঙ্কুশকৃমির দ্বারা আক্রান্ত; (২) এমন কি, মৃদুসংক্রমণেও জীবনীশক্তির খর্ব্বতা, রক্তহীনতা, জড়তা প্রভৃতি মন্দ ফলের জন্য ইহা দায়ী; (৩) অল্পব্যয়ে এই ব্যাধির প্রতিকার হইতে পারে; কিন্তু (৪) দূষিত ভূমিতলকে রোগসংক্রমণ হইতে মুক্ত করিলে তবে ইহাকে নিরস্ত করা এবং তদনুসারে ধ্বংস করা যাইতে পারে; এবং (৫) এই রোগের কারণ ও প্রকৃতি-সম্বন্ধীয় জ্ঞানের বিস্তৃত প্রচার এবং তৎপশ্চাতে জনগণের স্বাস্থ্যরক্ষা-সম্বন্ধীয় অভ্যাসসকলের পরিবর্ত্তনের দ্বারাই ইহা সম্ভাবিত হইতে পারে।

১৬৫

মা যখন মারা গেলেন, তখন Catherina-রবয়স পনেরো বৎসর মাত্র, সেই জন্য তিনি তখন আপনার কুটির পরিত্যাগ করিয়া, যে ধর্ম্মযাজকের দ্বারা আশৈশব শিক্ষিত হইয়াছিলেন তাঁহারই সহিত বাস করিতে গেলেন। তাঁহার গৃহে তিনি তাঁহার পুত্রকন্যার শিক্ষয়িত্রী পরিচারিকারূপে আবাস গ্রহণ করিলেন। Catherina কে ঐ বৃদ্ধ আপনার সন্তানদেরই একজনের ন্যায় দেখিতেন এবং বাড়ির অন্য সকলের শিক্ষায় নিযুক্ত যে সকল শিক্ষক ছিলেন তাঁহাদিগের দ্বারাই তাঁহাকে নৃত্যবিদ্যা ও সঙ্গীতে শিক্ষিতা করিতে লাগিলেন। এইরূপে Catherina ক্রমশই উন্নতি লাভ করিয়া চলিলেন যে পর্য্যন্ত না ধর্ম্মযাজকের মৃত্যু হইল। এই দুর্ঘটনায় পুনশ্চ তাঁহাকে দারিদ্র্যে অবতীর্ণ করিল।

১৬৬

লিভোনিয়া প্রদেশ এই সময় যুদ্ধের দ্বারা উচ্ছন্ন হইতেছিল, এবং শোচ্যতম ধ্বংসাবস্থায় পতিত হইয়াছিল। ঐসকল দুর্দ্দৈব চিরকালই দরিদ্রের পক্ষেই সর্ব্বাপেক্ষা দুর্ব্বহ হয়, ঐ কারণে Catherina এত নানা বিদ্যার অধিকারিণী হইয়াও নৈরাশ্যজনক অকিঞ্চনতার সর্ব্বপ্রকার দুঃখ ভোগ করিলেন। আহার্য্য প্রতিদিনই দুর্লভতর হইয়া উঠায় এবং তাঁহার নিজস্ব সম্বল একেবারে নিঃশেষিত হইয়া যাওয়ায় তিনি অবশেষে Marionburg নগরে যাত্রা করিতে সংকল্প করিলেন। তাঁহার ভ্রমণকালে একদিন সন্ধ্যার সময় যখন তিনি রাত্রিবাসের জন্য পথপার্শ্বস্থ এক কুটিরে প্রবেশ করিয়াছেন, তখন দুই জন সুইডীয় সৈনিকের দ্বারা তিনি উৎপীড়িত হন। ঘটনাক্রমে সেই সময় ঐ স্থান দিয়া একজন সৈন্যদলের উপনায়ক যাইতেছিলেন, তিনি তাঁহার সাহায্যার্থে উপস্থিত না হইলে উহারা অপমানকে সম্ভবত উপদ্রবে পরিণত করিত।