রাজা
একদল পদাতিক

প্রথম পদাতিক। সরে যাও সব, সরে যাও। তফাত যাও।

প্রথম পথিক। ইস, তাই তো! মস্ত লোক বটে। লম্বা পা ফেলে চলছেন। কেন রে বাপু, সরব কেন। আমরা সব পথের কুকুর নাকি।

দ্বিতীয় পদাতিক। আমাদের রাজা আসছেন।

দ্বিতীয় পথিক। রাজা? কোথাকার রাজা।

প্রথম পদাতিক। আমাদের এই দেশের রাজা।

প্রথম পথিক। লোকটা পাগল হল নাকি। আমাদের দেশের রাজা পাইক নিয়ে হাঁকতে হাঁকতে আবার রাস্তায় কবে বেরোয়।

দ্বিতীয় পদাতিক। মহারাজ আজ আর গোপন থাকবেন না, তিনি স্বয়ং আজ উৎসব করবেন।

দ্বিতীয় পথিক। সত্যি নাকি ভাই।

দ্বিতীয় পদাতিক। ঐ দেখো-না, নিশেন উড়ছে।

দ্বিতীয় পথিক। তাইতো রে, ওটা নিশেনেই তো বটে।

দ্বিতীয় পদাতিক। নিশেনে কিংশুক ফুল আঁকা আছে দেখছ না?

দ্বিতীয় পথিক। ওরে, কিংশুক ফুলই তো বটে। মিথ্যে বলে নি, একেবারে লাল টক্‌টক্‌ করছে।

প্রথম পাদাতিক। তবে! কথাটা যে বড়ো বিশ্বাস হল না!

দ্বিতীয় পথিক। না দাদা, আমি তো অবিশ্বাস করি নি। ঐ কুম্ভই গোলমাল করেছিল। আমি একটি কথাও বলি নি।

প্রথম পদাতিক। বেটা বোধ হয় শূন্যকুম্ভ, তাই আওয়াজ বেশি।

দ্বিতীয় পদাতিক। লোকটা কে হে। তোমাদের কে হয়।

দ্বিতীয় পথিক। কেউ না, কেউ না। আমাদের গ্রামের যে মোড়ল ও তার খুড়শ্বশুর— অন্য পাড়ায় বাড়ি।

দ্বিতীয় পদাতিক। হাঁ হাঁ, খুড়শ্বশুর-গোছের চেহারা বটে, বুদ্ধিটাও নেহাত খুড়শ্বশুরে ধাঁচার।

কুম্ভ। অনেক দুঃখে বুদ্ধিটা এইরকম হয়েছে। এই-যে সেদিন কোথা থেকে এক রাজা বেরোল, নামের গোড়ায় তিন-শো-পঁয়তাল্লিশটা শ্রী লাগিয়ে ঢাক পিটোতে পিটোতে শহর ঘুরে বেড়ালো— আমি তার পিছনে কি কম ফিরেছি। কত ভোগ দিলেম, কত সেবা করলেম, ভিটেমাটি বিকিয়ে যাবার জো হল। শেষকালে তার রাজাগিরি রইল কোথায়। লোকে যখন তার কাছে তালুক চায়, মুলুক চায়, সে তখন পাঁজিপুঁথি খুলে শুভদিন কিছুতেই খুঁজে পায় না। কিন্তু আমাদের কাছে খাজনা নেবার বেলায় মঘা অশ্লেষা ত্র্যস্পর্শ কিছুই তো বাধত না!

দ্বিতীয় পদাতিক। হাঁ হে কুম্ভ, আমাদের রাজাকে তুমি সেইরকম মেকি রাজা বলতে চাও!

প্রথম পদাতিক। ওহে খুড়শ্বশুর, এবার খুড়শাশুড়ির কাছে থেকে বিদায় নিয়ে এসো গে, আর দেরি নেই।

কুম্ভ। না বাবা, রাগ কোরো না। আমি কান মলছি, নাকে খত দিচ্ছি— যতদূর সরতে বল ততদূরই সরে দাঁড়াতে রাজি আছি।

দ্বিতীয় পদাতিক। আচ্ছা বেশ,এইখানে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকো। রাজা এলেন বলে। আমরা এগিয়ে গিয়ে রাস্তা ঠিক করে রাখি।