বন-ফুল
সকলের কাছে আজি লইব বিদায়!
গিরিরাজ হিমালয়!    ধবল তুষারচয়!
অয়ি গো কাঞ্চনশৃঙ্গ মেঘ-আবরণ!
অয়ি নির্ঝরিণীমালা!      স্রোতস্বিনী শৈলবালা!
অয়ি উপত্যকে! অয়ি হিমশৈলবন!
আজি তোমাদের কাছে       মুমূর্ষু বিদায় যাচে,
আজি তোমাদের কাছে অন্তিম বিদায়।
কুটীর পরণশালা    সহিয়া বিষাদজ্বালা
আশ্রয় লইয়াছিনু যাহার ছায়ায়—
স্তিমিত দীপের প্রায়   এত দিন যেথা হায়
অন্তিমজীবনরশ্মি করেছি ক্ষেপণ,
আজিকে তোমার কাছে      মুমূর্ষু বিদায় যাচে,
তোমারি কোলের পরে সঁপিব জীবন!
নেত্রে অশ্রুবারি ঝরে,        নহে তোমাদের তরে,
তোমাদের তরে চিত্ত ফেলিছে না শ্বাস—
আজি জীবনের ব্রত           উদ্‌যাপন করিব তো,
বাতাসে মিশাবে আজি অন্তিম নিশ্বাস!
কাঁদি না তাহার তরে,       হৃদয় শোকের ভরে
হতেছে না উৎপীড়িত তাহারো কারণ।
আহা হা! দুখিনী বালা       সহিবে বিষাদজ্বালা
আজিকার নিশিভোর হইবে যখন?
কালি প্রাতে একাকিনী       অসহায়া অনাথিনী
সংসারসমুদ্র-মাঝে ঝাঁপ দিতে হবে!
সংসারযাতনাজ্বালা            কিছু না জানিস্‌, বালা,
আজিও!— আজিও তুই চিনিস নে ভবে!
ভাবিতে হৃদয় জ্বলে,—      মানুষ কারে যে বলে
জানিস্‌ নে কারে বলে মানুষের মন।
কার দ্বারে কাল প্রাতে        দাঁড়াইবি শূন্যহাতে,
কালিকে কাহার দ্বারে করিবি রোদন!
অভাগা পিতার তোর       জীবনের নিশা ভোর—
বিষাদ নিশার শেষে উঠিবেক রবি
আজ রাত্রি ভোর হলে!      কারে আর পিতা বলে
ডাকিবি, কাহার কোলে হাসিবি খেলিবি?