বন-ফুল
ভুলিয়া শোকের জ্বালা    ওই রে চলিছে বালা।
কুটীর ডাকিছে যেন ‘যেয়ো না— যেয়ো না!’
তটিনীতরঙ্গকুল    ভিজায়ে গাছের মূল
ধীরে ধীরে বলে যেন ‘যেয়ো না!    যেয়ো না’ —
বনদেবী নেত্র খুলি    পাতার আঙ্গুল তুলি
যেন বলিছেন আহা ‘যেয়ো না!— যেয়ো না!’ —
নেত্র তুলি স্বর্গ-পানে    দেখে পিতা মেঘযানে
হাত নাড়ি বলিছেন ‘যেয়ো না!— যেয়ো না!’ —
বালিকা পাইয়া ভয়    মুদিল নয়নদ্বয়,
এক পা এগোতে আর হয় না বাসনা—
আবার আবার শুন    কানের কাছেতে পুন
কে কহে অস্ফুট স্বরে ‘যেয়ো না!— যেয়ো না!’

তৃতীয় সর্গ
‘যমুনার জল করে থল্‌ থল্‌
     কলকলে গাহি প্রেমের গান।
নিশার আঁচোলে পড়ে ঢোলে ঢোলে
     সুধাকর খুলি হৃদয় প্রাণ!
বহিছে মলয় ফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে,
     নুয়ে নুয়ে পড়ে কুসুমরাশি!
ধীরি ধীরি ধীরি ফুলে ফুলে ফিরি
     মধুকরী প্রেম আলাপে আসি!
আয় আয় সখি! আয় দুজনায়
     ফুল তুলে তুলে গাঁথি লো মালা।
ফুলে ফুলে আলা বকুলের তলা,
     হেথায় আয় লো বিপিনবালা।
নতুন ফুটেছে মালতীর কলি,
     ঢলি ঢলি পড়ে এ ওর পানে!
মধুবাসে ভুলি প্রেমালাপ তুলি
     অলি কত কি-যে কহিছে কানে!