প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
“ফল ফুল” প্রসঙ্গের পূর্ব্বে নিমনলিখিত প্রসঙ্গটি ছিল —
অদূরদর্শীরা আক্ষেপ করেন আমাদের দেশ, আমাদের সমাজ দরিদ্র। দূরদর্শীরা দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলেন আমাদের দেশ, আমাদের সমাজ দরিদ্র হইতে শিখিল না। সে দিন আমার বন্ধু ক দুঃখ করিতেছিলেন যে, আমাদের দেশে যথাসংখ্যক উপযুক্ত মাসিক পত্রিকার নিতান্ত অভাব। পন্ডিত খ কহিলেন, “আহা, আমাদের দেশে এমন দিন কবে আসিবে যে দিন উপযুক্ত মাসিক পত্রিকার যথার্থ অভাব উপস্থিত হইবে!” আসল কথা এই যে, দরিদ্র না হইলে বড়মানুষ হওয়া যায় না। নীচে না থাকিলে উপরে উঠা যায় না। বড়মানুষ নই বলিয়া দুঃখ করিবার আগে,দরিদ্র নই বলিয়া দুঃখ কর। যাহার অভাব নাই তাহার অভাব মোচন হইল না বলিয়া বিলাপ করা বৃথা। এখন আমাদের সমাজকে এমন একটা ঔষধ দিতে হইবে যাহা প্রথমে ঔষধরূপে ক্ষুধা জন্মাইয়া পরে পথ্যরূপে সেই ক্ষুধা মোচন করিবে। একেবারেই খাদ্য দেওয়ার ফল নাই। আমাদের দেশে যাহারা খাবারের দোকান খোলে তাহারা ফেল হয় কেন? আমাদের সমাজে যখনি একখানি মাসিক পত্রের জন্ম হয় তখনি সমাজ রাজপুত পিতার ন্যায় ভূমিষ্ঠশয্যাতেই তাহাকে বিনাশ করে কেন? যাহার আবশ্যক কেহ বোধ করে না সে টেকিয়া থাকিতে পারে না। অতএব আবশ্যকবোধ জন্মে নাই বলিয়াই দুঃখ, দ্রব্যটি নাই বলিয়া নহে।
“দ্রুত বুদ্ধি” প্রসঙ্গের নিমেনাদ্ধৃত শেষাংশ পরিত্যক্ত হইয়াছে —
কবিরা এইরূপ অসাধারণ বুদ্ধিমান। তাঁহারা বুঝেন, কিন্তু এত বিদ্যুৎ-বেগে যুক্তির রাস্তা অতিক্রম করিয়া আসেন যে, রাস্তা মনে থাকে না, কেবল বুঝেন মাত্র। কাজেই অনেক সমালোচককে রাস্তা বাহির করিবার জন্য জাহাজ পাঠাইতে হয়। বিষম হাঙ্গামা করিতে হয়। কবি উপস্থিত আছেন, অথচ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি উত্তর দিতে পারেন না। তিনি বসিয়া বসিয়া শুনিতেছেন — কেহ বলিতেছে উত্তরে পথ, কেহ বলিতেছে দক্ষিণে পথ। দ্রুতগামী কবি সহসা এমন একটা দূর ভবিষ্যতের রাজ্যে গিয়া উপস্থিত হন যে, বর্ত্তমান কাল তাঁহার ভাবভঙ্গী বুঝিতে পারে না। কি করিয়া বুঝিবে? বর্ত্তমান কালকে এক এক পা করিয়া রাস্তা খুঁজিয়া খুঁজিয়া সেইখানে যাইতে হইবে; কাজেই সে হঠাৎ মনে করে কবিটা বুঝি পথ হারাইয়া কোন অজায়গায় গিয়া উপস্থিত হইল ; কবিরা মহা দার্শনিক। কেবল দার্শনিকদের ন্যায় তাঁহারা ইচ্ছা করিলে নির্ব্বোধ হইতে পারেন না। কিয়ৎ-পরিমানে নির্ব্বোধ না হইলে এ সংসারে বুদ্ধিমান বলিয়া খ্যাতি হয় না।