প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
রাজপুত্র। আর তো চলছে না, বন্ধু।
সদাগর। কিসের চাঞ্চল্য তোমার, রাজকুমার।
রাজপুত্র। কেমন করে বলব। কিসের চাঞ্চল্য বলো দেখি ঐ হাঁসের দলের, বসন্তে যারা ঝাঁকে ঝাঁকে চলেছে হিমালয়ের দিকে।
সদাগর। সেখানে যে ওদের বাসা।
রাজপুত্র। বাসা যদি, তবে ছেড়ে আসে কেন। না না, ওড়বার আনন্দ, অকারণ আনন্দ।
সদাগর। তুমি উড়তে চাও?
রাজপুত্র। চাই বৈকি।
সদাগর। বুঝতেই পারি নে তোমার কথা। আমি তো বলি অকারণ ওড়ার চেয়ে সকারণ খাঁচায় বন্ধ থাকাও ভালো।
রাজপুত্র। সকারণ বলছ কেন।
সদাগর। আমরা-যে সোনার খাঁচায় থাকি শিকলে বাঁধা দানাপানির লোভে।
রাজপুত্র। তুমি বুঝতে পারবে না, বুঝতে পারবে না।
সদাগর। আমার ও দোষটা আছে, যা বোঝা যায় না তা আমি বুঝতেই পারি নে। একটু স্পষ্ট করেই বলো-না, কী তোমার অসহ্য হল।
রাজপুত্র। রাজবাড়ির এই একঘেয়ে দিনগুলো।
সদাগর। একঘেয়ে বল তাকে? কতরকম আয়োজন, কত উপকরণ।
রাজপুত্র। নিজেকে মনে হয় যেন সোনার মন্দিরে পাথরের দেবতা। কানের কাছে কেবল একই আওয়াজে বাজছে শঙ্খ কাঁসর ঘণ্টা। নৈবেদ্যের বাঁধা বরাদ্দ, কিন্তু ভোগে রুচি নেই। এ কি সহ্য হয়।
সদাগর। আমাদের মতো লোকের তো খুবই সহ্য হয়। ভাগ্যিস বাঁধা বরাদ্দ। বাঁধন ছিঁড়লেই তো মাথায় হাত দিয়ে পড়তে হয়। যা পাই তাতেই আমাদের ক্ষুধা মেটে। আর, যা পাও না তাই দিয়েই তোমরা মনে মনে ক্ষুধা মেটাতে চাও।
রাজপুত্র। আর, রোজ রোজ ঐ-যে চারণদের স্তব শুনতে হয় একই বাঁধা ছন্দে— সেই শার্দুলবিক্রীড়িত।
সদাগর। আমার তো মনে হয়, স্তব জিনিসটা বারবার যতই শোনা যায় ততই লাগে ভালো। কিছুতেই পুরোনো হয় না!
রাজপুত্র। ঘুম ভাঙতেই সেই এক বৈতালিকের দল। আর, রোজ সকালে সেই এক পুরুতঠাকুরের ধান দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ। আর আসতে যেতে দেখি, সেই বুড়ো কঞ্চুকীটা কাঠের পুতুলের মতো খাড়া দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশে। কোথাও যাবার জন্যে একটু পা বাড়িয়েছি কি অমনি কোথা থেকে প্রতিহারী এসে হাজির, বলে— ইত ইতৌ, ইত ইতৌ, ইত ইতৌ। সব্বাই মিলে মনটাকে যেন বুলি-চাপা দিয়ে রেখেছে।
সদাগর। কেন, মাঝে মাঝে যখন শিকারে যাও তখন বুনোজন্তু ছাড়া আর-কোনো উৎপাত তো থাকে না।
রাজপুত্র। বুনোজন্তু বলো কাকে। আমার তো সন্দেহ হয়, রাজশিকারী বাঘগুলোকে আফিম খাইয়ে রাখে। ওরা যেন