রাজা

পাঞ্চাল। আমরা সকলেই তো শুভযোগ দেখে বেরিয়েছি, কিন্তু কৃপণ বিধাতা তো একটি বৈ ফল রাখেন নি।

কোশল। এই ফলটি ত্যাগ করানোই হয়তো শুভগ্রহের কাজ।

কাঞ্চী। এ কী উদাসীনের মতো কথা বলছ কোশলরাজ! ফল ত্যাগ করাবার জন্যে এত আয়োজনের কী দরকার ছিল।

কোশল। ছিল বৈকি। কামনা না করে তো ত্যাগ করা যায় না। কাঞ্চীরাজ, আমাদের আসনগুলো যেন কেঁপে উঠল। এ কি ভূমিকম্প নাকি।

কাঞ্চী। ভূমিকম্প? তা হবে।

বিদর্ভ। কিম্বা হয়তো আর-কোনো রাজার সৈন্যদল এসে পড়ল।

কলিঙ্গ। তা হতে পারে, কিন্তু তা হলে তো দূতের মুখে সংবাদ পাওয়া যেত।

বিদর্ভ। আমার কাছে এটা কিন্তু দুর্লক্ষণ বলে মনে হচ্ছে।

কাঞ্চী। ভয়ের চক্ষে সব লক্ষণই দুর্লক্ষণ।

বিদর্ভ। অদৃষ্টপুরুষকে ভয় করি, সেখানে বীরত্ব খাটে না।

পাঞ্চাল। বিদর্ভরাজ, আজকেকার শুভকার্যে দ্বিধা জন্মিয়ে দিয়ো না।

কাঞ্চী। অদৃষ্ট যখন দৃষ্ট হবেন তখন তাঁর সঙ্গে বোঝাপড়া করে যাবে।

বিদর্ভ। তখন হয়তো সময় থাকবে না। আমার আশঙ্কা হচ্ছে, যেন একটা—

কাঞ্চী। ঐ ‘যেন একটা’ র কথা তুলবেন না— ওটা আমাদেরই সৃষ্টি, অথচ আমাদেরই বিনাশ করে।

কলিঙ্গ। বাইরে বাজনা বাজছে নাকি।

পাঞ্চাল। বাজনা বলেই বোধ হচ্ছে।

কাঞ্চী। তবে আর কী, নিশ্চয়ই রানী সুদর্শনা। বিধাতা এতক্ষণ পরে আমাদের ভাগ্যফল নিয়ে আসছেন— এ তাঁরই পায়ের শব্দ। (জনান্তিকে) সুবর্ণ,অমনতরো সংকুচিত হয়ে আবার আড়ালে আপনাকে লুকিয়ে রেখো না। তোমার হাতে আমার রাজছত্র কাঁপছে যে।

যোদ্ধৃবেশে ঠাকুরদার প্রবেশ

কলিঙ্গ। ও কী ও! ও কে!

পাঞ্চাল। বিনা আহ্বানে প্রবেশ করে লোকটা কে হে।

বিরাট। স্পর্ধা তো কম নয়! কলিঙ্গরাজ, তুমি একে রোধ করো।

কলিঙ্গ। আপনারা বয়োজ্যেষ্ঠ থাকতে আমার অগ্রসর হওয়া অশোভন হবে।

বিদর্ভ। শোনা যাক-না কী বলে।

ঠাকুরদা। রাজা এসেছেন।

বিদর্ভ। (সচকিত হইয়া) রাজা!

পাঞ্চাল। কোন্‌ রাজা।

কলিঙ্গ। কোথাকার রাজা।

ঠাকুরদা। আমার রাজা।