মালঞ্চ

আদিত্য। মনে মনে তুমি নিশ্চয় জানো আমার দোষ ছিল না।

নীরজা। অত নিশ্চয় করে কী করে জানব বলো? আমার কি আর সেদিন আছে?

আদিত্য। দিনের কথা হিসেব করে কী হবে? তুমি তো আমার সেই তুমিই আছ।

নীরজা। আজ যে আমার সকল তাতেই ভয় করে। জোর পাই নে যে মনে।

আদিত্য। অল্প একটু ভয় করতে ভালো লাগে। না? খোঁটা দিয়ে আমাকে একটুখানি উসকিয়ে দিতে চাও। এ চাতুরী মেয়েদের স্বভাবসিদ্ধ।

নীরজা। আর ভুলে যাওয়া বুঝি পুরুষদের স্বভাবসিদ্ধ? নয়?

আদিত্য। ভুলতে ফুরসত দাও কই!

নীরজা। বোলো না, বোলো না, পোড়া বিধাতার শাপে লম্বা ফুরসত দিয়েছি যে।

আদিত্য। উলটো বললে। সুখের দিনে ভোলা যায়, ব্যথার দিনে নয়।

নীরজা। সত্যি বলো, আজ সকালে তুমি ভুলে চলে যাও নি?

আদিত্য। কী কথা বলো তুমি। চলে যেতে হয়েছিল কিন্তু যতক্ষণ না ফিরেছি মনে স্বস্তি ছিল না।

নীরজা। কেমন করে বসেছ তুমি! তোমার পা দুটো বিছানায় তোলো।

আদিত্য। বেড়ি দিতে চাও পাছে পালাই?

নীরজা। হাঁ, বেড়ি দিতেই চাই। জনমে মরণে তোমার পা দুখানি নিঃসন্দেহে রইল আমার কাছে বাঁধা।

আদিত্য। মাঝে মাঝে একটু একটু সন্দেহ কোরো, তাতে আদরের স্বাদ বাড়ায়।

নীরজা। না, একটুও সন্দেহ না। এতটুকুও না। তোমার মতো এমন স্বামী কোন্‌ মেয়ে পেয়েছে? তোমাকেও সন্দেহ, তাতে যে আমাকেই ধিক‍্কার।

আদিত্য। আমি তা হলে তোমাকেই সন্দেহ করব, নইলে জমবে না নাটক।

নীরজা। তা কোরো, কোনো ভয় নেই। সেটা হবে প্রহসন।

আদিত্য। যাই বলো আজ কিন্তু রাগ করেছিলে আমার ’পরে!

নীরজা। কেন আবার সে কথা? শাস্তি তোমাকে দিতে হবে না।— নিজের মধ্যেই তার দণ্ডবিধান।

আদিত্য। দণ্ড কিসের জন্য? রাগের তাপ যদি মাঝে মাঝে দেখা না দেয় তা হলে বুঝব ভালোবাসার নাড়ি ছেড়ে গেছে।

নীরজা। যদি কোনোদিন ভুলে তোমার উপরে রাগ করি, নিশ্চয় জেনো সে আমি নয়, কোনো অপদেবতা আমার উপরে ভর করেছে।

আদিত্য। অপদেবতা আমাদের সকলেরই একটা করে থাকে, মাঝে মাঝে অকারণে জানান দেয়। সুবুদ্ধি যদি আসে, রাম নাম করি, দেয় সে দৌড়।

আয়া এল ঘরে

রোশনি। জামাইবাবু, আজ সকাল থেকে খোঁখী দুধ খায় নি, ওষুধ খায় নি, মালিশ করে নি। এমন করলে আমরা ওর সঙ্গে পারব না।

বলেই হন হন করে হাত দুলিয়ে চলে গেল