প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
রাজা। মহারাজ, আপনি যে শরতের বিজয়যাত্রায় বেরিয়েছেন আজ তার পরিচয় পাওয়া গেল। আজ এমন হার আনন্দে হেরেছি, কোনো যুদ্ধে এমনটি ঘটতে পারত না। আমি যে আপনার অধীন এই গৌরবই আমার সকল যুদ্ধজয়ের চেয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে। কী করলে আমি রাজত্ব করবার উপযুক্ত হব সেই উপদেশটি চাই।
সন্ন্যাসী। উপদেশটি কথায় ছোটো, কাজে অত্যন্ত বড়ো। রাজা হতে গেলে সন্ন্যাসী হওয়া চাই।
রাজা। উপদেশটি মনে রাখব, পেরে উঠব বলে ভরসা হয় না।
লক্ষেশ্বর। আমাকেও ঠাকুর—না না, মহারাজ, ঐ-রকম একটা কী উপদেশ দিয়েছিলেন, সে আমি পেরে উঠলেম না, বোধ করি মনে রাখতেও পারব না।
সন্ন্যাসী। উপদেশে বোধ করি তোমার বিশেষ প্রয়োজন নেই।
লক্ষেশ্বর। আজ্ঞা না।
উপনন্দ। ঠাকুর! একি, রাজা যে! এরা সব কারা!
সন্ন্যাসী। এসো, এসো বাবা,এসো, কী বলছিলে বলো। ( উপনন্দ নিরুত্তর ) এঁদের সামনে বলতে লজ্জা করছ? আচ্ছা, তবে সোমপাল একটু অবসর নাও। তোমরাও—
উপনন্দ। সে কী কথা! ইনি যে আমাদের রাজা, এঁর কাছে আমাকে অপরাধী কোরো না। আমি তোমাকে বলতে এসেছিলেম, এই কদিন পুঁথি লিখে আজ তার পারিশ্রমিক তিন কাহন পেয়েছি। এই দেখো।
সন্ন্যাসী। আমার হাতে দাও বাবা! তুমি ভাবছ এই তোমার বহুমূল্য তিন কার্ষাপণ আমি লক্ষেশ্বরের হাতে ঋণশোধের জন্য দেব? এ আমি নিজে নিলেম। আমি এখানে শারদার উৎসব করেছি, এ আমার তারই দক্ষিণা। কী বল বাবা?
উপনন্দ। ঠাকুর, তুমি নেবে!
সন্ন্যাসী। নেব বৈকি। তুমি ভাবছ সন্ন্যাসী হয়েছি বলেই আমার কিছুতে লোভ নেই? এ-সব জিনিসে আমার ভারি লোভ।
লক্ষেশ্বর। সর্বনাশ! তবেই হয়েছে! ডাইনের হাতে পুত্র সমর্পণ করে বসে আছি দেখছি!
সন্ন্যাসী। ওগো শ্রেষ্ঠী!
শ্রেষ্ঠী। আদেশ করুন।
সন্ন্যাসী। এই লোকটিকে হাজার কার্ষাপণ গুণে দাও।
শ্রেষ্ঠী। যে আদেশ।
উপনন্দ। তবে ইনিই কি আমাকে কিনে নিলেন?
সন্ন্যাসী। উনি তোমাকে কিনে নেন ওঁর এমন সাধ্য কী! তুমি আমার।
উপনন্দ। ( পা জড়াইয়া ধরিয়া ) আমি কোন্ পুণ্য করেছিলেম যে আমার এমন ভাগ্য হল!
সন্ন্যাসী। ওগো সুভূতি!
মন্ত্রী। আজ্ঞা!