তাসের দেশ
রুইতন-হরতনীর পুনঃপ্রবেশ

রুইতন। দোষ দেব কাকে। আমারই গাইতে ইচ্ছা করছে।

হরতনী। দেখো, সম্পাদক যেন শুনতে না পায়, স্তম্ভে চড়াবে। সে দেখলুম ঘুরে বেড়াচ্ছে এই বনের খবর নিতে।

রুইতন। দেখো, হরতনী, ভয় কিন্তু আমার গেছে ঘুচে, কেন কী জানি। একটা কিছু হুকুম করো, তোমার জন্যে দুঃসাধ্য কিছু একটা করতে চাই।

হরতনী। আর যাই কর গান গেয়ো না, বনে জবা ফুটেছে, তুলে এনে দাও। ফুলের রস দিয়ে রাঙাব পায়ের তলা।

রুইতন। দেখো, সুন্দরী, আজ সকালে উঠেই বুঝেছি, আমাদের এই তাসজন্মটা স্বপ্ন। সেটা হঠাৎ ভাঙল। আমাদের আর-এক জন্ম বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। তারই বাণী আসছে মুখে, তারই গান শুনছি কানে। ঐ শোনো, ঐ শোনো, আমার সেই যুগের রচিত গান আকাশ থেকে ঐ কে বয়ে আনছে।

গান
তোমার   পায়ের তলায় যেন গো রঙ লাগে,
আমার   মনের বনের ফুলের রাঙা রাগে।
        যেন   আমার গানের তানে
        তোমায়   ভূষণ পরাই কানে,
যেন     রক্তমণির হার গেঁথে দিই প্রাণের অনুরাগে॥

হরতনী। এ গান কোনোদিন তুমিই বেঁধেছিলে, আর আমারই জন্যে? কেমন করে বাঁধলে।

রুইতন। যেমন করে তুমি বাঁধলে বেণী।

হরতনী। আচ্ছা, মনে কি আসছে, তোমার গানে আমি নেচেছিলুম কোনো-একটা যুগে।

রুইতন। মনে আসছে, আসছে। এতদিন ভুলে ছিলুম কী করে তাই ভাবি।

গান
উতল হাওয়া লাগল আমার গানের তরণীতে।
            দোলা লাগে, দোলা লাগে
        তোমার    চঞ্চল ওই নাচের লহরীতে।
                যদি কাটে রসি,
            যদি   হাল পড়ে খসি,
            যদি   ঢেউ উঠে উচ্ছ্বসি,
            সম্মুখেতে মরণ যদি জাগে,
করি নে ভয়, নেবই তারে নেবই তারে জিতে।

রুইতন। দেখো হরতনী, মন ছট্‌ফটিয়ে উঠেছে যমরাজের সঙ্গে পাল্লা দিতে। আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ছবি, তুমি পরিয়ে দিলে আমার কপালে জয়তিলক, আমি বেরলুম বন্দিনীকে উদ্ধার করতে, বন্ধ দুর্গের দ্বারে বাজালুম আমার ভেরী। কানে আসছে বিদায়কালে যে গান তুমি গেয়েছিলে।