প্রকৃতির প্রতিশোধ
ওই দেখো দূরে ওই গৃহটি তোমার—
চারি দিকে রহিয়াছে লতিকার বেড়া,
ওই সে অশোক গাছ বামে উঠিয়াছে,
ওই তরুতলে বসে আমরা দুজনে
কত রাত্রি জোছনাতে কথা কহিয়াছি।
প্রথম।    দুদিনের এ বিরহ ত্বরায় ফুরাবে,
আনন্দের মাঝে পুন হইবে মিলন।
দ্বিতীয়।    মনে যেন রেখো, সখা সুদূর প্রবাসে—
পুরাতন এ বন্ধুরে ভুলিয়ো না যেন।
দেবতা রাখুন সুখে আর কী কহিব।
[প্রস্থান
সন্ন্যাসী।    আহা, যেতে যেতে দোঁহে চায় ফিরে ফিরে,
অশ্রুজলে ভালো করে দেখিতে না পায়।
বিপুল জগৎ-মাঝে দিগন্তের পানে
সখা ওর কোথা গেল, কে জানে কোথায়!
এ কী সংশয়ের দেশে রয়েছি আমরা,
চোখের আড়ালে হেথা সবি অনিশ্চয়।
বারেক যে কাছ হতে দূরে চলে গেল
হয়তো সে কাছে ফিরে আর আসিবে না।
তাই সদা চোখে চোখে রেখে দিতে চাই,
তাই সদা টেনে নিই বুকের মাঝেতে।
কোথা কে অদৃশ্য হয় চারি দিক হতে,
যাহা-কিছু বাকি থাকে ভয়ে তাহাদের
আরো যেন দৃঢ় করে ধরি জড়াইয়া।
সবাই চলিয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন দিশে,
অসীম জগতে মোরা কে কোথায় থাকি,
মাঝে লোক-লোকান্তের ব্যবধান পড়ে।
তবু কি গলায় দিবি মোহের বন্ধন!
সুখ দুঃখ নিয়ে তবু করিবি কি খেলা!
যে রবে না তবু তারে রাখিবারে চাস!
ওরে, আমি প্রতিদিন দেখিতেছি, যেন
কে আমারে অবিরত আনিতেছে টেনে।