প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
|
![]() |
“শুনলে তুমি রাগ করবে।”
“না শুনলে আরো রাগ করব।”
“কুম্ভকোনাম থেকে এক জ্যোতিষী এসেছেন তাঁকে দিয়ে একবার ভাগ্যপরীক্ষা করাতে চাই।”
মধুসূদনের বুকটা ধড়াস্ করে উঠল, ইচ্ছে করল এখনই ছুটে তার কাছে যায়। মুখে তর্জন করে বললে, “তুমি বিশ্বাস কর?”
“সহজ অবস্থায় করি নে, ভয় লাগলেই করি।”
“ভয়টা কিসের শুনি?”
নবীন কোনো জবাব না করে মাথা চুলকোতে লাগল।
“ভয়টা কাকে বলোই-না।”
“এ সংসারে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভয় করি নে। কিছুদিন থেকে তোমার ভাবগতিক দেখে মন সুস্থির হচ্ছে না।”
সংসারের লোক মধুসূদনকে বাঘের মতো ভয় করে এইটেতে তার ভারি তৃপ্তি। নবীনের মুখের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে গম্ভীরভাবে সে গুড়গুড়ি টানতে টানতে নিজের মাহাত্ম্য অনুভব করতে লাগল।
নবীন বললে, “তাই একবার স্পষ্ট করে জানতে চাই গ্রহ কী করতে চান আমাকে নিয়ে। আর তিনি ছুটিই বা দেবেন কোন্ নাগাত।”
“তোমার মতো নাস্তিক, তুমি কিছু বিশ্বাস কর না, শেষকালে— ”
“দেবতার ’পরে বিশ্বাস থাকলে গ্রহকে বিশ্বাস করতুম না দাদা। ডাক্তারকে যে মানে না হাতুড়েকে মানতে তার বাধে না।”
নিজের গ্রহকে যাচাই করে নেবার জন্যে মধুসূদনের যে পরিমাণ আগ্রহ হল, সেই পরিমাণ ঝাঁজের সঙ্গে বললে, “লেখাপড়া শিখে বাঁদর, তোমার এই বিদ্যে? যে যা বলে তাই বিশ্বাস কর?”
“লোকটার কাছে যে ভৃগুসংহিতা রয়েছে— যেখানে যে-কেউ যে-কোনো কালে জন্মেছে, জন্মাবে, সকলের কুষ্ঠি একেবারে তৈরি, সংস্কৃত ভাষায় লেখা, এর উপর তো আর কথা চলে না। হাতে হাতে পরীক্ষা করে দেখে নাও।”
“বোকা ভুলিয়ে যারা খায়, বিধাতা তাদের পেট ভরাবার জন্যে যথেষ্ট পরিমাণে তোমাদের মতো বোকাও সৃষ্টি করে রাখেন।”
“আবার সেই বোকাদের বাঁচাবার জন্যে তোমাদের মতো বুদ্ধিমানও সৃষ্টি করেন। যে মারে তার উপরে তাঁর যেমন দয়া, যাকে মারে তার উপরেও তেমনি। ভৃগুসংহিতার উপরে তোমার তীক্ষ্ম বুদ্ধি চালিয়ে দেখোই-না।”
“আচ্ছা, বেশ, কাল সকালেই আমাকে নিয়ে যেয়ো, দেখব তোমার কুম্ভকোনামের চালাকি।”
“তোমার যেরকম জোর অবিশ্বাস দাদা, ওতে গণনায় গোল হয়ে যেতে পারে। সংসারে দেখা যায় মানুষকে বিশ্বাস করলে মানুষ বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। গ্রহদেরও ঠিক সেই দশা, দেখো-না কেন সাহেবগুলো গ্রহ মানে না বলে গ্রহের ফল ওদের উপর খাটে না। সেদিন তেরোস্পর্শে বেরিয়ে তোমাদের ছোটোসাহেব ঘোড়দৌড়ে বাজি জিতে এল— আমি হলে বাজি জেতা দুরস্তাং ঘোড়াটা ছিটকে এসে আমার পেটে লাথি মেরে যেত। দাদা, এই সব গ্রহনক্ষত্রের হিসেবের উপর তোমাদের বুদ্ধি খাটাতে যেয়ো না, একটু বিশ্বাস মনে রেখো।”
মধুসূদন খুশি হয়ে স্মিতহাস্যে গুড়গুড়িতে মনোযোগ দিলে।
পরদিন সকাল সাতটার মধ্যে মধুসূদন নবীনের সঙ্গে এক সরু গলির আবর্জনার ভিতর দিয়ে বেঙ্কট শাস্ত্রীর বাসায় গিয়ে উপস্থিত। অন্ধকার একতলার ভাপ্সা ঘর; লোনাধরা দেয়াল ক্ষতবিক্ষত, যেন সাংঘাতিক চর্মরোগে আক্রান্ত, তক্তপোশের উপর ছিন্ন মলিন একখানা শতরঞ্চ, এক প্রান্তে কতকগুলো পুঁথি এলোমেলো জড়ো করা, দেয়ালের গায়ে শিবপার্বতীর এক পট। নবীন হাঁক