শেষ বর্ষণ

       সেই মুরতি এই বিরাজে,

      ছায়াতে আলোতে আঁচল গাঁথা

আমার   অকারণ বেদনার বীণাপাণি।

রাজা। শরৎশ্রী কাকে ইশারা করে ডাকছে? বলো তো এবার কে আসবে?

নটরাজ। উনি ডাকছেন সুন্দরকে। যা ছিল ছায়ার কুঁড়ি তা ফুটল আলোর ফুলে। গানের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে দেখুন।

সুন্দরের প্রবেশ

কার বাঁশি নিশিভোরে বাজিল মোর প্রাণে?

ফুটে দিগন্তে অরুণ-কিরণ-কলিকা।

শরতের আলোতে সুন্দর আসে,

ধরণীর আঁখি যে শিশিরে ভাসে

হৃদয়কুঞ্জবনে মঞ্জরিল

            মধুর শেফালিকা।

রাজা। নটরাজ, শরৎলক্ষ্মীর সহচরটি এরই মধ্যে চঞ্চল হয়ে উঠলেন কেন?

নটরাজ। শিশির শুকিয়ে যায়, শিউলি ঝরে পড়ে, আশ্বিনের সাদা মেঘ আলোয় যায় মিলিয়ে। ক্ষণিকের অতিথি স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আসেন। কাঁদিয়ে দিয়ে চলে যান। এই যাওয়া-আসায় স্বর্গ-মর্ত্যের মিলনপথ বিরহের ভিতর দিয়ে খুলে যায়।

হে ক্ষণিকের অতিথি,

এলে প্রভাতে কারে চাহিয়া,

ঝরা শেফালির পথ বাহিয়া।

কোন্‌ অমরার বিরহিণীরে

চাহ নি ফিরে,

কার বিষাদের শিশিরনীরে

এলে নাহিয়া।

ওগো অকরুণ, কী মায়া জান,

মিলনছলে বিরহ আন।

চলেছ পথিক আলোক-যানে

আঁধারপানে,

মন-ভুলানো মোহন তানে

গান গাহিয়া।

নটরাজ। এইবার কবির বিদায় গান। বাঁশি হবে নীরব। যদি কিছু বাকি থাকে সে থাকবে স্মরণের মধ্যে।

আমার রাত পোহাল শারদ প্রাতে।

বাঁশি, তোমায় দিয়ে যাব কাহার হাতে।