প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
মন্ত্রী। আজ্ঞা।
সন্ন্যাসী। আমার পুত্র নেই বলে তোমরা সর্বদা আক্ষেপ করতে। এবারে সন্ন্যাসধর্মের জোরে এই পুত্রটি লাভ করেছি।
লক্ষেশ্বর। হায় হায়, আমার বয়স বেশি হয়ে গেছে ব’লে কী সুযোগটাই পেরিয়ে গেল!
মন্ত্রী। বড়ো আনন্দ! তা ইনি কোন্ রাজগৃহে –
সন্ন্যাসী। ইনি যে-গৃহে জন্মেছেন সে গৃহে জগতের অনেক বড়ো বড়ো বীর জন্মগ্রহণ করেছেন —পুরাণ ইতিহাস খুঁজে সে আমি তোমাকে পরে দেখিয়ে দেব। লক্ষেশ্বর!
লক্ষেশ্বর। কী আদেশ।
সন্ন্যাসী। বিজয়াদিত্যের হাত থেকে তোমার মণিমাণিক্য আমি রক্ষা করেছি, এই তোমাকে ফিরে দিলেম।
লক্ষেশ্বর। মহারাজ, যদি গোপনে ফিরিয়ে দিতেন তাহলেই যথার্থ রক্ষা করতেন, এখন রক্ষা করে কে!
সন্ন্যাসী। এখন বিজয়াদিত্য স্বয়ং রক্ষা করবেন, তোমার ভয় নেই। কিন্তু, তোমার কাছে আমার কিছু প্রাপ্য আছে।
লক্ষেশ্বর। সর্বনাশ করলে!
সন্ন্যাসী। ঠাকুরদা সাক্ষী আছেন।
লক্ষেশ্বর। এখন সকলেই মিথ্যে সাক্ষ্য দেবে।
সন্ন্যাসী। আমাকে ভিক্ষা দিতে চেয়েছিলে। তোমার কাছে এক মুঠো চাল পাওনা আছে। রাজার মুষ্টি কি ভরাতে পারবে?
লক্ষেশ্বর। মহারাজ, আমি সন্ন্যাসীর মুষ্টি দেখেই কথাটা পেড়েছিলেম।
সন্ন্যাসী। তবে তোমার ভয় নেই, যাও।
লক্ষেশ্বর। মহারাজ, ইচ্ছে করেন যদি তবে এইবার কিছু উপদেশ দিতে পারেন।
সন্ন্যাসী। এখনো দেরি আছে।
লক্ষেশ্বর। তবে প্রণাম হই। চার দিকে সকলেই কৌটোটার দিকে বড্ড তাকাচ্ছে।
সন্ন্যাসী। রাজা সোমপাল, তোমার কাছে আমার একটি প্রার্থনা আছে।
সোমপাল। সে কী কথা! সমস্তই মহারাজের, যে আদেশ করবেন–
সন্ন্যাসী। তোমার রাজ্য থেকে আমি একটি বন্দী নিয়ে যেতে চাই।
সোমপাল। যাকে ইচ্ছা নাম করুন সৈন্য পাঠিয়ে দিচ্ছি। না হয় আমি নিজেই যাব।
সন্ন্যাসী। বেশি দূরে পাঠাতে হবে না। (ঠাকুরদাদাকে দেখাইয়া) তোমার এই প্রজাটিকে চাই।
সোমপাল। কেবল মাত্র এঁকে! মহারাজ যদি ইচ্ছা করেন তবে আমার রাজ্যে যে শ্রুতিধর স্মৃতিভূষণ আছেন তাঁকে আপনার সভায় নিয়ে যেতে পারেন।
সন্ন্যাসী। না, অত বড়ো লোককে নিয়ে আমার সুবিধা হবে না, আমি এঁকেই চাই। আমার প্রাসাদে অনেক জিনিস আছে, কেবল বয়স্য নেই।
ঠাকুরদাদা। বয়সে মিলবে না প্রভু, গুণেও না; তবে কিনা ভক্তি দিয়ে সমস্ত অমিল ভরিয়ে তুলতে পারব এই ভরসা আছে।
সন্ন্যাসী। ঠাকুরদা, সময় খারাপ হলে বন্ধুরা পালায়, তাই তো দেখছি। আমার উৎসবের বন্ধুরা এখন সব কোথায়? রাজদ্বারের গন্ধ পেয়েই দৌড় দিয়েছে না কি!