মালিনী
আপন করিতে হবে— যে-কিছু বাসনা
শুধু আপনার তরে তাই দুঃখময়।
যজ্ঞে যাগে তপস্যায় কভু মুক্তি নয়,
মুক্তি শুধু বিশ্বকাজে। ফিরে গিয়ে ঘরে
সে নিশীথে কাঁদিয়া কহিনু উচ্চস্বরে,
‘বন্ধু, বন্ধু, কোথা গেছ বহু বহু দূরে—
অসীম ধরণীতলে মরিতেছ ঘুরে! ’
ছিনু তার পত্র-আশে— পত্র নাহি পাই,
না জানি সংবাদ। আমি শুধু আসি যাই
রাজগৃহমাঝে, চারি দিকে দৃষ্টি রাখি,
শুধাই বিদেশীজনে, ভয়ে ভয়ে থাকি—
নাবিক যেমন দেখে চকিত নয়নে
সমুদ্রের মাঝে, গগনের কোন্‌ কোণে
ঘনাইছে ঝড়। এল ঝড় অবশেষে
একখানি ছোটো পত্ররূপে। লিখেছে সে—
রত্নবতী নগরীর রাজগৃহ হতে
সৈন্য লয়ে আসিছে সে শোণিতের স্রোতে
ভাসাইতে নবধর্ম, ভিড়াইতে তীরে
পিতৃধর্ম মগ্নপ্রায়, রাজকুমারীরে
প্রাণদণ্ড দিতে। প্রচণ্ড আঘাতে সেই
ছিঁড়িল প্রাচীন পাশ এক নিমেষেই।
রাজারে দেখানু পত্র। মৃগয়ার ছলে
গোপনে গেছেন রাজা সৈন্যদলবলে
আক্রমিতে তারে। আমি হেথা লুটাতেছি
পৃথ্বীতলে— আপনার মর্মে ফুটাতেছি
দন্ত আপনার।
মালিনী।                   হায়, কেন তুমি তারে
আসিতে দিলে না হেথা মোর গৃহদ্বারে
সৈন্যসাথে? এ ঘরে সে প্রবেশিত আসি
পূজ্য অতিথির মতো, সুচিরপ্রবাসী
ফিরিত স্বদেশে তার।