ভগ্নহৃদয়
দ্বাত্রিংশ সর্গ
নলিনী
       আজ আমি নিতান্ত একাকী—
      কেহ নাই, কেহ নাই হায়!
শূন্য বাতায়নে বসি পথপানে চেয়ে থাকি,
সকলেই গৃহমুখে চলে যায়— চলে যায়!
      নলিনীর কেহ নাই হায়!
পুরানো প্রণয়ী-সাথে চোখে চোখে দেখা হলে
শরমে আকুল হয়ে তাড়াতাড়ি যায় চলে!
প্রণয়ের স্মৃতি শুধু অনুতাপ-রূপে জাগে,
ভুলিবারে চাহে যেন ভালো যে বাসিত আগে।
বিবাহ করেছে তারা, সুখেতে রয়েছে কিবা—
ভাই বন্ধু মিলি সবে কাটাইছে নিশি দিবা।
সকলেই সুখে আছে যে দিকে ফিরিয়া চাই,
আমি শুধু করিতেছি ‘কেহ নাই—কেহ নাই।
তাদের প্রেয়সী যদি মোরে দেখিবারে পায়
হাসিয়া লুকানো হাসি মোর মুখ-পানে চায়—
অবাক হইয়া তারা ভাবে মনে মনে,
“এই কি নলিনী সেই     মুখে যার হাসি নেই,
বিষাদ-আঁধার জাগে জ্যোতিহীন দু-নয়নে!
এই কি নাথের মন হরেছিল একেবারে!”
কিছুতে সে কথা যেন বিশ্বাস করিতে নারে!
হয়তো সে অভিমানে তুলিয়া পুরানো কথা
নাথের হৃদয়ে তার দিতে চায় মনোব্যথা।
অমনি সে সসংকোচে যেন অপরাধী-মতো
মরমে মরিয়া গিয়া বুঝাইতে চায় কত!
সেদিন খেলিতেছিল নীরদের ছেলে দুটি,
কচি মুখে আধ’ আধ’ কথা পড়িতেছে ফুটি,
অযতনে কপালেতে পড়ে আছে চুলগুলি—
চুপিচুপি কাছে গিয়ে কোলেতে লইনু তুলি।
বুকেতে ধরিনু চাপি, হৃদয় ফাটিয়া গিয়া