নলিনী
ক’রে আয় না! তুই ওঁর কাছে গিয়ে একটু গান-টান গেয়ে শোনালে উনি ভালো থাকেন। তাই তুই যা,আমি ফুল তুলে নিয়ে যাচ্চি।

ফুলি। কাকা,তোমার কি হয়েছে!

নীরদ। কি আর হবে ফুলি!

ফুলি। তবে তুমি অমন ক’রে আছ কেন কাকা?

নীরদ। (কোলে টানিয়া লইয়া) কিছুই হয় নি বাছা!

ফুলি। কাকা,তুমি গান শুনবে?

নীরদ। না রে, এখন গান শুনতে বড়ো ইচ্ছে করচে না!

ফুলি। তবে তুমি ফুল নেবে?

নীরদ। আমাকে ফুল কে দেবে ফুলি?

ফুলি। কেন,নলিনী ঐখেনে ফুল তুলচে, ঐদিকে ঢের ফুটেচে– ঐখেনে চল না কেন? (নলিনীর কাছে টানিয়া লইয়া গিয়া) কাকাকে কতকগুলি ফুল দাও না ভাই, উনি ফুল চাচ্চেন!

নলিনী। তুই কি চোকে দেখতে পাস নে? দেখ দেখি গাছের তলায় কি ক’রে দিলি? অমন সুন্দর বকুলগুলি সব মাড়িয়ে দিয়েছিস! হ্যাঁ হ্যাঁ, ফুলি, আমরা যে সে দিন সেই ঝোপের মধ্যে পাখীর বাসায় সেই পাখীর ছানাগুলিকে দেখেছিলুম,আজ তাদের চোক ফুটেচে,তারা কেমন পিট্‌পিট্‌ ক’রে চাচ্চে! তাদের মা খাবার আনতে গেছে,এই বেলা আয়,আমরা তাদের একটি একটি ক’রে ঘাসের ধান খাওয়াই গে!

ফুলি। কোথায় সে, কোথায় সে, চল না। ( উভয়ের দ্রুত গমন )

নলিনী। (কিছু দূর গিয়া ফুলির প্রতি) ঐ যা,তোর কাকাকে ফুল দিয়ে আসতে ভুলে গেচি! তুই ছুটে যা, এই ফুল দুটি তাঁকে দিয়ে আয় গে। আমার নাম করিস নে যেন!

ফুলি। (নীরদের কাছে আসিয়া ) এই নাও কাকা, ফুল এনেছি।

নীরদ। (চুম্বন করিয়া ) আমি ভেবেছিলেম আমাকে কেউ ফুল দেবে না। শেষ কালে তোর কাছ থেকে
পেলেম!

নলিনী। (দুর হইতে) ফুলি,তুই আবার গেলি কোথায়? ঝট্‌ ক’রে আয় না, বেলা বয়ে যায়।

ফুলি। এই যাই। (ছুটিয়া যাওন )

নীরদ। (স্বগত ) এ যেন রূপের ঝড়ের মত,যেখেন দিয়ে বয়ে যায় সেখেনে তোলপাড় ক’রে দেয়। এতটা আমি ভালোবাসি নে! আমার প্রাণ শ্রান্ত পাখীটির মত একটি গাছের ছায়া চায়, প্রচ্ছন্ন সুখের কুলায় চায়। আমি তো এত অধীরতা সইতে পারি নে, একটুখানি বিরাম, একটুখানি শান্তি কোথায় পাব? (নলিনীর কাছে গিয়া ) নলিনী, তুমি আমার একটি কথার উত্তর দেবে না?

নতশিরা নলিনীর স্তব্ধভাবে আঁচলের ফুল-গণনা

কখন তুমি আমার সঙ্গে একটি কথা কও নি – আজ তোমাকে বেশী কিছু বলোতে হবে না, একবার কেবলো আমার নামটি ধরে ডাক, তোমার মুখে একবার কেবলো আমার নামটি শোনবার সাধ হয়েছে। আমার এইটুকু সাধও কি মিটবে না? না হয় একবার বলো যে, না! বলো যে, মিটবে না! বলো যে,তোমাকে আমার ভালো লাগে না,তুমি কেন আমার কাছে কাছে ঘুরে বেড়াও! আমার এই দুর্ব্বল ক্ষীণ আশাটুকুকে আর কত দিন বাঁচিয়ে রাখব? তোমার একটি কঠিন কথায় তাকে একেবারে বধ ক’রে ফেল,আমার যা