মালঞ্চ

আদিত্য। সেবার ছলে কাছে আসবার সুযোগ যদি পাই ছাড়ব কেন?

নীরজা। তার চেয়ে কোনো সুযোগে তোমার বাগানের কাজে যদি যাও তো আমি ঢের বেশি খুশি হব। আমি পড়ে আছি আর দিনে দিনে বাগান যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

আদিত্য। হোক-না নষ্ট। সেরে ওঠো আগে, তার পর সেদিনকার মতো দুজনে মিলে কাজ করব।

নীরজা। সরলা চলে গেছে, তুমি একলা পড়েছ, কাজে মন যাচ্ছে না। কিন্তু উপায় কী? তাই বলে লোকসান করতে দিয়ো না।

আদিত্য। লোকসানের কথা আমি ভাবছি নে নীরু। বাগান করাটা যে আমার ব্যাবসা সে কথা এতদিন তুমিই ভুলিয়ে রেখেছিলে, কাজে তাই সুখ ছিল। এখন মন যায় না।

নীরজা। অমন করে আক্ষেপ করছ কেন? বেশ তো কাজ করছিলে এই সেদিন পর্যন্ত। কিছুদিনের জন্যে যদি বাধা পড়ে তাই নিয়ে এত ব্যাকুল হোয়ো না।

আদিত্য। পাখাটা কি চালিয়ে দেব?

নীরজা। বাড়াবাড়ি কোরো না তুমি, এ-সব কাজ তোমাদের নয়। এতে আমাকে আরো ব্যস্ত করে তোলে। যদি কোনোরকম করে দিন কাটাতে চাও তো তোমাদের তো হর্টিকাল্‌চরিস‍্ট ক্লাব আছে।

আদিত্য। তুমি যে রঙিন লিলি ভালোবাস, বাগানে অনেক খুঁজে একটাও পাই নি। এবারে ভালো বৃষ্টি হয় নি বলে গাছগুলোর তেজ নেই।

নীরজা। কী তুমি মিছিমিছি বকছ! তার চেয়ে হলাকে ডেকে দাও, আমি শুয়ে শুয়েই বাগানের কাজ করব। তুমি কি বলতে চাও আমি শয্যাগত বলেই আমার বাগানও হবে শয্যাগত। শোনো আমার কথা। শুকনো সীজন ফুলের গাছগুলো উপড়িয়ে ফেলে সেখানে জমি তৈরি করিয়ে নাও। আমার সিঁড়ির নীচের ঘরে সরষের খোলের বস্তা আছে। হলার কাছে আছে তার চাবি।

আদিত্য। তাই নাকি? হলা তো এতদিন কিছুই বলে নি।

নীরজা। বলতে ওর রুচবে কেন? ওকে কি তোমরা কম হেনস্তা করেছ? কাঁচা সাহেব এসে প্রবীণ কেরানিকে যে-রকম গ্রাহ্য করে না সেই রকম আর-কি।

আদিত্য। হলা মালী সম্বন্ধে সত্য কথা বলতে যদি চাই তবে সেটা অপ্রিয় হয়ে উঠবে।

নীরজা। আচ্ছা, আমি এই বিছানায় পড়ে থেকেই ওকে দিয়ে কাজ করাব, দেখবে দুদিনেই বাগানের চেহারা ফেরে কি না। বাগানের ম্যাপটা আমার কাছে দিয়ো। আর আমার বাগানের ডায়েরিটা। আমি ম্যাপে পেন্সিলের দাগ দিয়ে সমস্ত ব্যবস্থা করে দেব।

আদিত্য। আমার তাতে কোনো হাত থাকবে না?

নীরজা। না, যাবার আগে এ বাগানে সম্পূর্ণ আমার ছাপ মেরে দেব। বলে রাখছি, রাস্তার ধারের ঐ বট্‌ল্‌পামগুলো আমি একটাও রাখব না। ওখানে ঝাউগাছের সার লাগিয়ে দেব। অমন করে মাথা নেড়ো না। হয়ে গেলে তখন দেখো। তোমাদের ঐ লন্‌টা আমি রাখব না, ওখানে মার্বলের একটা বেদী বাঁধিয়ে দেব।

আদিত্য। বেদীটা কি ও জায়গায় মানাবে? একটু যেন যাকে বলে সস্তা নবাবী।

নীরজা। চুপ করো। খুব মানাবে। তুমি কোনো কথা বলতে পারবে না। কিছুদিনের জন্যে এ বাগানটা হবে একলা আমার, সম্পূর্ণ আমার। তার পর সেই আমার বাগানটা আমি তোমাকে দিয়ে যাব। ভেবেছিলে আমার শক্তি গেছে। দেখিয়ে দেব কী করতে পারি। আরো তিনজন মালী আমার চাই, আর মজুর লাগবে জন-ছয়েক। মনে আছে একদিন তুমি বলেছিলে বাগান সাজিয়ে তোলার