প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
|
![]() |
প্রথম। সেই তো ভয়ের কথা। অস্ত্রপরীক্ষায় অস্ত্র না চালিয়ে যদি বুদ্ধি চালাও সেটা যে দুষ্টবুদ্ধি।
তৃতীয়। দেখো বংশী, অস্ত্রই চলুক আর বুদ্ধিই চলুক মাঝের থেকে তোমার ঐ জিভটিকে চালিয়ো না, আমার এই পরামর্শ। যদি টিকে থাকতে চাও তো চুপ করে থাকো।
দ্বিতীয়। বনমালী ঠিক কথাই বলেছে। ঐ ছোটো কুমারের কথা উঠলেই তুমি যা মুখে আসে তাই বলে ফেল। রাজার ছেলে—কে ভালো কে মন্দ সে বিচারের ভার আমাদের উপর নেই। তবে কিনা, আমাদের যুবরাজ বেঁচে থাকুন আর আমাদের মধ্যম কুমার ভাই লক্ষ্মণের মতো সর্বদা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে থেকে তাঁকে রক্ষে করুন, ভগবানের কাছে এই প্রর্থনা করো। ছোটো কুমারের কথা মুখে না আনাই ভালো।
প্রথম। ইচ্ছে করে তো আনি নে। আমাদের মধ্যম কুমার সরল মানুষ, মনে তাঁর ভয়-ডরও নেই, পাক-চক্রও নেই—সর্বদাই ভয় হয় ঐ যাঁর নামটা করছি নে তিনি কখন তাঁকে কী ফেসাদে ফেলেন।
দ্বিতীয়। চল্ চল্, ঐ আসছেন।
প্রথম। ঐ-যে সঙ্গে ওঁর মামাতো ভাই ধুরন্ধরটিও আছেন—শনির সঙ্গে মঙ্গল এসে জুটেছেন।
রাজধর। অসহ্য হয়েছে।
ধুরন্ধর। কিন্তু সহ্য করতেও তো কসুর নেই। ইন্দ্রকুমারের সঙ্গে তো প্রায় জন্মাবধিই এইরকম চলছে, কিন্তু অসহ্য হয়েছে এমন তো লক্ষণ দেখি নে।
রাজধর। লক্ষণ দেখিয়ে লাভ হবে কী? যখন দেখাব একেরারে কাজে দেখাব। একটা সুযোগ এসেছে। এইবার অস্ত্রপরীক্ষায় আমি লক্ষ্যভেদ করব।
ধুরন্ধর। ইন্দ্রকুমারের বক্ষে না কি?
রাজধর। বক্ষে নয়, তার হৃদয়ে। এবারকার পরীক্ষায় আমি জিতব, ওঁর অহংকারটাকে বিঁধে এফোঁড় ওফোঁড় করব।
ধুরন্ধর। অস্ত্রপরীক্ষায় ইন্দ্রকুমারকে জিতবে এইটেকেই সুযোগ বলছ?
রাজধর। সুযোগ কি তীরের মুখে থাকে? সুযোগ বুদ্ধির ডগায়। তোমাকে কিন্তু একটি কাজ করতে হবে।
ধুরন্ধর। কাজ তো তোমার বরাবরই করে আসছি, ফল তো কিছু পাই নে।
রাজধর। ফল সবুরে পাওয়া যায়। কোনোরকম ফন্দিতে ইন্দ্রকুমার-দাদার অস্ত্রশালায় ঢুকে তাঁর তূণের প্রথম খোপটি থেকে তাঁর নাম-লেখা তীরটি তুলে নিয়ে আমার নাম-লেখা তীর বসিয়ে আসতে হবে। তার সঙ্গে আমার তীর বদল করতে হবে, ভাগ্যও বদল হবে।
ধুরন্ধর। সবই যেন বুঝলুম কিন্তু আমার প্রাণটি? সেটি গেলে তো কার সঙ্গে বদল চলবে না।
রাজধর। তোমার কোনো ভয় নেই, আমি আছি।
ধুরন্ধর। তুমি তো বরাবরই আছ, কিন্তু ভয়ও আছে। সেই যখন ইন্দ্রকুমারের রুপোর-পাত-দেওয়া ধনুকটার উপরে তুমি লোভ করলে আমিই তো সেটি সংগ্রহ করে তোমার ঘরে এনে লুকিয়ে রেখেছিলুম। শেষকালে যখন ধরা পড়লে ইন্দ্রকুমার ঘৃণা করে সে ধনুকটা তোমাকে দান করলেন, কিন্তু আমার যে অপমানটা করলেন সে আমার জীবন গেলেও যাবে না। তখন তো ভাই, তুমি