প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
সতীশ ছুটিয়া আসিয়া সুচরিতার কোলের কাছে দাঁড়াইয়া কহিল, “দিদি।”
সুচরিতা তাহার গলা জড়াইয়া কহিল, “কী ভাই বক্তিয়ার!”
সতীশ কহিল, “সোমবার ললিতাদিদির বিয়ে— এ ক’দিন আমি বিনয়বাবুর বাড়িতে গিয়ে থাকব। তিনি আমাকে ডেকেছেন।”
সুচরিতা কহিল, “মাসিকে বলেছিস?”
সতীশ কহিল, “মাসিকে বলেছিলুম, তিনি রাগ করে বললেন, আমি ও-সব কিছু জানি নে, তোমার দিদিকে বলো, তিনি যা ভালো বোঝেন তাই হবে। দিদি, তুমি বারণ কোরো না। সেখানে আমার পড়াশুনার কিচ্ছু ক্ষতি হবে না, আমি রোজ পড়ব, বিনয়বাবু আমার পড়া বলে দেবেন।”
সুচরিতা কহিল, “কাজকর্মের বাড়িতে তুই গিয়ে সকলকে অস্থির করে দিবি।”
সতীশ ব্যগ্র হইয়া কহিল, “না দিদি, আমি কিছু অস্থির করব না।”
সুচরিতা কহিল, “তোর খুদে কুকুরটাকে সেখানে নিয়ে যাবি নাকি?”
সতীশ কহিল, “হাঁ, তাকে নিয়ে যেতে হবে, বিনয়বাবু বিশেষ করে বলে দিয়েছেন। তার নামে লাল চিঠির কাগজে ছাপানো একটা আলাদা নিমন্ত্রণ-চিঠি এসেছে— তাতে লিখেছে তাকে সপরিজনে গিয়ে জলযোগ করে আসতে হবে।”
সুচরিতা কহিল, “পরিজনটি কে?”
সতীশ তাড়াতাড়ি কহিল, “কেন, বিনয়বাবু বলেছেন, আমি। তিনি আমাদের সেই আর্গিনটাও নিয়ে যেতে বলেছেন দিদি, সেটা আমাকে দিয়ো— আমি ভাঙব না।”
সুচরিতা কহিল, “ভাঙলেই যে আমি বাঁচি। এতক্ষণে তা হলে বোঝা গেল— তাঁর বিয়েতে আর্গিন বাজাবার জন্যেই বুঝি তোর বন্ধু তোকে ডেকেছেন? রোশন-চৌকিওয়ালাকে বুঝি একেবারে ফাঁকি দেবার মতলব?”
সতীশ অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া কহিল, “না, কক্খনো না। বিনয়বাবু বলেছেন, আমাকে তাঁর মিতবর করবেন! মিতবরকে কী করতে হয় দিদি?”
সুচরিতা কহেল, “সমস্ত দিন উপোস করে থাকতে হয়।”
সতীশ এ কথা সম্পূর্ণ অবিশ্বাস করিল। তখন সুচরিতা সতীশকে কোলের কাছে দৃঢ় করিয়া টানিয়া কহিল, “আচ্ছা, ভাই বক্তিয়ার, তুই বড়ো হলে কী হবি বল্ দেখি।”
ইহার উত্তর সতীশের মনের মধ্যে প্রস্তুত ছিল। তাহার ক্লাসের শিক্ষকই তাহার কাছে অপ্রতিহত ক্ষমতা ও অসাধারণ পাণ্ডিত্যের আদর্শস্থল ছিল— সে পূর্ব হইতেই মনে মনে স্থির করিয়া রাখিয়াছিল সে বড়ো হইলে মাস্টারমশাই হইবে।
সুচরিতা তাহাকে কহিল, “অনেক কাজ করবার আছে ভাই। আমাদের দুই ভাইবোনের কাজ আমরা দুজনে মিলে করব। কী বলিস সতীশ? আমাদের দেশকে প্রাণ দিয়ে বড়ো করে তুলতে হবে। বড়ো করব কী! আমাদের দেশের মতো বড়ো আর কী আছে! আমাদের প্রাণকেই বড়ো করে তুলতে হবে। জানিস? বুঝতে পেরেছিস?”