শেষ বর্ষণ
দিল ওই শেফালি। সে লেখার শেষ নেই, তাই বারে বারেই অশ্রান্ত ঝরা আর ফোটা। দেবতার বাণীকে যে এনেছে মর্তে, তার ব্যথা কজন বোঝে? সেই করুণার গান সন্ধ্যার সুরে তোমরা ধরো।

         ওলো শেফালি,

সবুজ ছায়ার প্রদোষে তুই জ্বালিস দীপালি।

         তারার বাণী আকাশ থেকে

         তোমার রূপে দিল এঁকে

    শ্যামল পাতায় থরে থরে আখর রূপালি।

বুকের খসা গন্ধ-আঁচল রইল পাতা সে

    কাননবীথির গোপন কোণের বিবশ বাতাসে।

         সারাটা দিন বাটে বাটে

         নানা কাজে দিবস কাটে,

    আমার সাঁঝে বাজে তোমার করুণ ভূপালি।

 

রাজা। নটরাজ, অমন শুকতারাতে শেফালিতে ভাগ করে করে শরৎকে দেখাবে কেমন করে?

নটরাজ। আর দেরি নেই, কবি ফাঁদ পেতেছে। যে মাধুরী হাওয়া হাওয়ায় আভাসে ভেসে বেড়ায় সেই ছায়ারূপটিকে ধরেছে কবি আপন গানে। সেই ছায়ারূপিণীর নূপুর বাজল, কঙ্কণ চমক দিল কবির সুরে, সেই সুরটিকে তোমাদের কণ্ঠে জাগাও তো।

যে-ছায়ারে ধরব বলে করেছিলেম পণ

আজ যে মেনে নিল আমার গানেরই বন্ধন।

      আকাশে যার পরশ মিলায়

      শরৎ মেঘের ক্ষণিক লীলায়

আপন সুরে আজ শুনি তার নূপুরগুঞ্জন।

      অলস দিনের হাওয়ায়

গন্ধখানি মেলে যেত গোপন আসাযাওয়ায়।

      আজ শরতের ছায়ানটে

      মোর রাগিণীর মিলন ঘটে

সেই মিলনের তালে তালে বাজায় সে কঙ্কণ।

নটরাজ। শুভ্র শান্তির মূর্তি ধরে এইবার আসুন শরৎশ্রী। সজল হাওয়ার দোল থেমে যাবে— আকাশে আলোক-শতদলের উপর তিনি চরণ রাখুন, দিকে দিগন্তে সে বিকশিত হয়ে উঠুক।

এসো শরতের অমল মহিমা,

          এসো হে ধীরে।

চিত্ত বিকাশিবে চরণ ঘিরে।

বিরহ-তরঙ্গে অকূলে সে যে দোলে