প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
কুমুদিনী। মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে সংকটের দিনে কি কিছুই করতে পারি নে, কেবল কেঁদেই মরতে পারি?
দেওয়ানজি। সে কী কথা! দুঃখের দিনে তোমার দাদাকে তুমি যে সান্ত্বনা দিচ্ছ গয়না দেওয়ার সঙ্গে তার কি তুলনা হয় মা? চোখ জুড়িয়ে আজ তুমি যে তাঁর সামনে আছ এই তো পরম সৌভাগ্য। বিধাতা আমাদের সর্বস্ব নিতে পারেন, কিন্তু তোমার দাদার সব চেয়ে বড়ো সম্পদ যে তিনি তোমারই হৃদয়ের মধ্যে লুকিয়ে রেখে দিয়েছেন, সে কথা তুমি বুঝবে কী করে।
কুমুদিনী। এ কথা কাউকে বলি নি, আজ তোমাকেই বলছি, কাকাবাবু, জানি নে কেন কেবলই আমার মন বলছে আমারই আপন ভাগ্যে আমিই আমার দাদাকে রক্ষা করব— সেইজন্যেই এই সর্বনাশের দিনে আমি জন্মেছি। নইলে আমার কী দরকার ছিল এই সংসারে।
দেওয়ানজি। তোমার মুখখানি দেখলেই বুঝতে পারি মা, লক্ষ্মী আমাদের ঘরে বিদায় নেবার সময় তোমাকেই তাঁর প্রতিনিধি রেখে দিয়ে গেছেন। সব অভাব দূর হবে।
কুমুদিনী। পরশুদিন যখন দাদার মুখ বড়ো শুকনো দেখেছিলুম, আমি থাকতে পারলুম না, ঠাকুরঘরে গিয়ে ঠাকুরকে বললুম— আমাদের দুঃখের দিন শেষ হল এই কথাটি বলো তুমি, প্রসন্ন যদি হয়ে থাক তবে তোমার পায়ে যেন আজ অপরাজিতার একটি ফুল দিয়ে প্রণাম করতে পারি। থালা থেকে চোখ বুজে নানা ফুলের মধ্যে যেই একটি ফুল তুলে নিলেম— দেখি সেটি অপরাজিতা। সেই দিন থেকে আমার বাঁ চোখ নাচছে। ইচ্ছে হল ছুটে গিয়ে দাদাকে এই সুখবরটা দিই। কিন্তু দাদা যে এ-সব কিছুই মানেন না, তাই বলতে পারলুম না। কাকাবাবু, তুমিও কি ঠাকুর মান না?
দেওয়ানজি। সে কী কথা মা! যে ঠাকুর তুমি আর তোমার দাদার মতো মানুষ গড়েছেন তাঁকে মানব না এত অসাড় কি আমার মন?
কুমুদিনী। দাদা শুনলে হেসে বলবেন এ সমস্তই রূপকথা— কিন্তু কাল রাত্রে অরুন্ধতী তারার দিকে চেয়ে যখন বসে ছিলেম, আমি যেন বুকের মধ্যে শুনতে পেলেম দূরের রথের শব্দ— অন্ধকারের ভিতর দিয়ে রাজা আসছেন, আমাকে গ্রহণ করবেন, সব দুঃখ দূর করবেন। কাকাবাবু, দুটি পায়ে পড়ি আমার কথা তুমি বিশ্বাস করো।
দেওয়ানজি। খুব বিশ্বাস করি। আমি যে কিনু আচার্যির কাছে বর্ষফল গণনা করাতে গিয়েছিলেম, তিনি কুষ্ঠি দেখে বললেন তুমি রাজরানী হবে, আর দেরী নেই। তবে যাই মা— আমার কাজ আছে।
[ প্রস্থান
কুমুদিনী। বনমালী। ও বনমালী!
বনমালী ভৃত্যের প্রবেশ
ভৃত্য। কী দিদিমণি!
কুমুদিনী। ওই-যে ভিখারি যাচ্ছে। একটু থামতে বল্— আমার একখানা কাপড় নিয়ে আসি, ওকে দিতে হবে। আমার হাতে আজ কিছু নেই।
বনমালী। আমার কাছে আছে, আমি কিছু দিয়ে দিচ্ছি, কাপড়খানি কেন নষ্ট করবে?
কুমুদিনী। তুই দিলে আমার তাতে কী? তুই জানিস নে ওই ভিক্ষুকের কাছেও আমি ভিক্ষুক— ওর আশীর্বাদে আমার দরকার আছে!
[ প্রস্থান