যোগাযোগ

এখনো ভয় করছে দিদি?

কুমুদিনী। না, আমার কিচ্ছু ভয় করছে না। এই আমার অভিসার। বাইরে অন্ধকার, ভিতরে আলো।

মোতির মা। ওমা, বড়োঠাকুর যে এই দিকেই আসছে।

কুমুদিনী। ছোটোবউ, এখনি না, এখনি না — আর-একটুখানি পরে। পর্দাটা ফেলে দাও।

মোতির মা। এই-যে এসে পড়েছেন, এখন পর্দা ফেললে অনর্থপাত হবে। তাই হোক, ফেলেই দিই।

 

শ্যামাসুন্দরী ও মধুসূদনের প্রবেশ

কুমুদিনীকে শোনাবার মতো গলা চড়িয়ে

 

মধুসূদন। কী, হয়েছে কী?

শ্যামাসুন্দরী। তা তো বলতে পারি নে। দাদা দাদা করেই বউ হেদিয়ে গেল। তুমিই জিজ্ঞাসা করো-না, একটু বোসো কাছে।

মধুসূদন। কী হবে! আমি তো ওর দাদা নই।

শ্যামাসুন্দরী। মিছে রাগ করছ ঠাকুরপো। ওরা বড়ো ঘরের মেয়ে, পোষ মানতে সময় লাগবে।

মধুসূদন। রোজ রোজ উনি যাবেন মুর্ছো, আর আমি ওঁর মাথায় কবিরাজি তেল মালিশ করব, এইজন্যে কি ওঁকে বিয়ে করেছিলুম?

শ্যামাসু্‌ন্দরী। ঠাকুরপো, তোমার কথা শুনে হাসি পায়। আমাদের কালে কথায় কথায় মানিনীর মান ভাঙাতে হত, এখন না হয় মুর্ছো ভাঙাতে হয়। — ঠাকুরপো, অমন মন খারাপ কোরো না, দেখে সইতে পারি নে। ওই-যে আসছে বউ — কিন্তু ওর সঙ্গে রাগারাগি কোরো না ভাই, ও ছেলেমানুষ।

[ প্রস্থান

কুমুদিনী বাইরে এসে দাঁড়াল

 

মধুসূদন। বাপের বাড়ি থেকে মুর্ছো অভ্যেস করে এসেছ বুঝি! কিন্তু আমাদের এখানে ওটার চলন নেই। তোমাদের ওই নুরনগরী চাল ছাড়তে হবে।

 

কুমুদিনী নিরুত্তর

আমি কাজের লোক, সময় কম, হিস্টিরিয়াওয়ালি মেয়ের খিদ্‌মদ্‌গারি করবার ফুরসত আমার নেই, এই সাফ বলে দিলুম।

কুমুদিনী। তুমি আমাকে অপমান করতে চাও, হার মানতে হবে। নেব না, তোমার অপমান মনের মধ্যে নেব না।

মধুসূদন। তুমি তোমার দাদার চেলা, কিন্তু জেনে রেখো, আমি তোমার সেই দাদার মহাজন। তাকে এক হাটে কিনে আর-এক হাটে বেচতে পারি।

কুমুদিনী। দেখো, নিষ্ঠুর হও তো হোয়ো, কিন্তু ছোটো হোয়ো না।

মধুসূদন। কী, আমি ছোটো! আর তোমার দাদা আমার চেয়ে বড়ো।

কুমুদিনী। তোমাকে বড়ো জেনেই তোমার দ্বারে এসেছি।

মধুসূদন। বড়ো জেনেই এসেছ, না বড়োমানুষ জেনেই টাকার লোভে এসেছ?

[ কুমুদিনীর দ্রুত প্রস্থান