প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
পকেট থেকে কাগজের পুঁটুলি কুমুদিনীর কোলে ফেলে রেখেই
মোতিলালের পালাবার উপক্রম
কুমুদিনী। না, তোমাকে পালাতে দেব না।
মোতিলাল। তা হলে এখন দেখো না।
কুমুদিনী। ভয় নেই, তুমি চলে গেলে তখন খুলব।
মোতিলাল। আচ্ছা জ্যাঠাইমা, তুমি জটাই বুড়িকে দেখেছ?
কুমুদিনী। কী জানি, তোমার বয়সে হয়তো দেখে থাকব, ভুলে গেছি।
মোতিলাল। একতলায় উঠোনের পাশে কয়লার ঘরে সন্ধে হলেই চামচিকের পিঠে চড়ে সে আসে। ইচ্ছে করলেই সে ছোট্ট হয়ে যেতে পারে, চোখে দেখা যায় না।
কুমুদিনী। মন্তরটা শিখে নিতে হবে তো।
মোতিলাল। কেন জ্যাঠাইমা?
কুমুদিনী। অদৃশ্য হয়ে পালাবার দরকার হতে পারে।
মোতিলাল। জটাই বুড়ি কয়লার ঘরে সিঁদুরের কৌটো লুকিয়ে রেখেছে। যে মেয়ে সেই সিঁদুরের টিপ কপালে পরবে সে হবে রাজরানী।
কুমুদিনী। সর্বনাশ! কোনো হতভাগিনী খবর পেয়েছে নাকি?
মোতিলাল। সেজোপিসিমার মেয়ে খুদি জানে। ছন্নু বেয়ারার সঙ্গে সে কয়লার ঘরে যায়, ভয় করে না।
কুমুদিনী। ছেলেমানুষ, তাই রাজরানী হতে ও ভয় পায় না। সেই কৌটো কয়লা-চাপাই থাক্, তার চেয়ে দামি জিনিস তোমার এই মোড়কের মধ্যে আছে নিশ্চয়। খুলি এইবার।
মোতিলাল। আচ্ছা, খোলো।
কুমুদিনী। এ যে লজঞ্চুস। তোমার ভোগের সামগ্রী আমাকে দিলে গোপাল, মনে থাকবে। তোমার মিষ্টি দিয়ে তুমি তো আমার মন মিষ্টি করে দিলে, আমি তোমাকে দিলুম আমার নিজের তোলা ফুল আমার নিজের সেলাই করা রুমালে বেঁধে। আমার পুজো রইল এই ফুলে, আর এই রুমালে রইল আমার স্নেহ।
মোতির মা। ও কী করলে দিদি? এ ফুল যে তুমি পুজোর জন্যে তুলে এনেছিলে।
কুমুদিনী। ঠিক জায়গাতেই পৌঁছল বোন, দেবতা বঞ্চিত হবেন না।
মোতিলাল। আচ্ছা জ্যাঠাইমা, এই কাঁচের গোলাটা নিয়ে তুমি কী কর?
কুমুদিনী। কিছুই করি নে, তোমাকে খেলতে দেব বলে রেখে দিয়েছি। তুমি হাতে করে নিলেই ও আমার পাওয়া হবে।
মোতিলাল। খেলা হয়ে গেলে আবার তোমাকে ফিরিয়ে দেব।
কুমুদিনী। সে কি হয়? দিয়ে ফিরিয়ে নিলে যে অপরাধ হয়।
মোতিলাল। তা হলে আমি নিয়ে যাই।
[ প্রস্থান
মোতির মা। কী করলে দিদি! হাবলুর হাতে ওই কাগজ- চাপা দেখলে বড়োঠাকুর রক্ষা রাখবেন না। আমার উপর দোষ পড়বে যে আমিই ওকে চুরি করতে শিখিয়েছি।
কুমুদিনী। আমার ঠাকুরেরও তো চুরির অপবাদ আছে — যা তাঁরই ধন তাই চুরির ছল করে নিয়ে তাঁর খেলা।