প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
কুমুদিনী। দাদা, তাতে তোমার অনিষ্ট, তোমার অশান্তি হবে না?
বিপ্রদাস। অনিষ্ট অশান্তি কাকে তুই বলিস কুমু? তুই যদি অসম্মানের মধ্যে ডুবে থাকিস, তার চেয়ে অনিষ্ট আমার আর কী হতে পারে? যদি জানি যে, যে ঘরে তুই আছিস সে তোর ঘর হয়ে উঠল না, তোর উপর যার একান্ত অধিকার সে তোর একান্ত পর, তবে আমার পক্ষে তার চেয়ে অশান্তি ভাবতে পারি নে। বাবা তোকে খুব ভালবাসতেন, কিন্তু তখনকার দিনে কর্তারা থাকতেন দূরে দূরে। তোর পক্ষে পড়াশুনোর দরকার আছে তা তিনি মনেই করতেন না। আমিই নিজে গোড়া থেকে তোকে শিখিয়েছি, তোকে মানুষ করে তুলেছি। তোর বাপ-মার চেয়ে আমি কোনো অংশে কম না। সেই মানুষ করে তোলার দায়িত্ব যে কী, আজ তা বুঝতে পারছি। তুই যদি অন্য মেয়ের মতো হতিস তা হলে কোথাও তোর ঠেকত না। আজ যেখানে তোর স্বাতন্ত্র্যকে কেউ বুঝবে না, সম্মান করবে না, সেখানে- যে তোর নরক। আমি কোন্ প্রাণে তোকে সেখানে নির্বাসিত করে থাকব? যদি আমার ছেটো ভাই হতিস তা হলে যেমন করে থাকতিস, তেমনি করেই চিরদিন থাক্-না আমার কাছে।
কুমুদিনী। কিন্তু আমি তোমাদের তো ভার হয়ে থাকব না? ঠিক বলছ?
বিপ্রদাস। ভার কেন হবি বোন? তোকে খুব খাটিয়ে নেব। আমার সব কাজ দেব তোর হাতে। কোনো প্রাইভেট সেক্রেটারি এমন করে কাজ করতে পারবে না। আমাকে তোর বাজনা শোনাতে হবে ; আমার ঘোড়া তোর জিম্মেয় থাকবে। তা ছাড়া জানিস আমি শেখাতে ভালোবাসি। তোর মতো ছাত্রী পাব কোথায় বল্? এক কাজ করা যাবে — অনেক দিন থেকে পার্শি পড়বার শখ আমার আছে, একলা পড়তে ভালো লাগে না, তোকে নিয়ে পড়ব। তুই নিশ্চয় আমার চেয়ে এগিয়ে যাবি, আমি একটুও হিংসে করব না দেখিস।
আরো একটা কথা তোকে বলে রাখি কুমু, খুব শীঘ্রই আমাদের কাল-বদল হবে, আমাদের চালও বদলাবে। আমাদের থাকতে হবে গরিবের মতো। তখন তুই থাকবি আমাদের গরিবের ঐশ্বর্য হয়ে।
চোখের জল মুছে
কুমুদিনী। আমার এমন ভাগ্য যদি হয় তো বেঁচে যাই।
কুমুদিনী
মোতির মা ও হাবলুকে নিয়ে নবীনের প্রবেশ। কুমুদিনীর বুকে
মাথা দিয়ে অভিমানে হাবলুর কান্না
হাবলুকে জড়িয়ে ধরে
কুমুদিনী। কঠিন সংসার, গোপাল, কান্নার অন্ত নেই। কী আছে আমার, কী দিতে পারি, যাতে মানুষের ছেলের কান্না কমে। কান্না দিয়ে কান্না মেটাতে চাই, তার বেশি শক্তি নেই। যে ভালোবাসা আপনাকে দেয়, তার অধিক আর কিছু দিতে পারে না, বাছারা, সেই ভালোবাসা তোরা পেয়েছিস। জ্যাঠাইমা চিরদিন থাকবে না, কিন্তু এই কথাটা মনে রাখিস, মনে রাখিস, মনে রাখিস।
নবীন। বউরানী, এবার রজবপুরে পৈতৃক ঘরে চলেছি। এখানকার পালা সাঙ্গ হল।