শাপমোচন

তার   দূরের বাণীর পরশমানিক লাগুক আমার প্রাণে এসে।

শস্যখেতের গন্ধখানি   একলা ঘরে দিক সে আনি,

ক্লান্তগমন পান্থ হাওয়া লাগুক আমার মুক্তকেশে।

নীল আকাশের সুরটি নিয়ে বাজাক আমার বিজন মনে,

ধূসর পথের উদাস বরন মেলুক আমার বাতায়নে।

সূর্য-ডোবার রাঙা বেলায়   ছড়াব প্রাণ রঙের খেলায়,

আপন-মনে চোখের কোণে অশ্রু-আভাস উঠবে ভেসে॥

গান্ধারের দূত এল মদ্ররাজধানীতে। বিবাহ-প্রস্তাব শুনে রাজা বললে, “আমার কন্যার দুর্লভ ভাগ্য। ”

সখীরা রাজকন্যাকে গিয়ে বললে—

বাজিবে, সখী, বাঁশি বাজিবে।

হৃদয়রাজ হৃদে রাজিবে

বচন রাশি রাশি     কোথা যে যাবে ভাসি,

অধরে লাজহাসি সাজিবে।

নয়নে আঁখিজল     করিবে ছলছল,

সুখবেদনা মনে বাজিবে।

মরমে মুরছিয়া     মিলাতে চাবে হিয়া

সেই চরণযুগরাজীবে॥

চৈত্রপূর্ণিমার পুণ্যতিথিতে শুভলগ্ন। সেই বিবাহরাত্রে দূরে একলা বসে রাজার বুকের মধ্যে রক্ত ঢেউ খেলিয়ে উঠল। কেবলই তার মনে হতে লাগল,লোকান্তরে কার সঙ্গে এইরকম জ্যোৎস্নারাত্রে সে যেন এক-দোলায় দুলেছিল। ভুলে-যাওয়ার কুহেলিকার ভিতর থেকে পড়েছে মনে। একটা পদ তার মনে গুঞ্জরিয়া উঠছে ‘ভুলো না—ভুলো না— ভুলো না’—

 

সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা।

সেই স্মৃতিটুকু কভু খনে খনে যেন জাগে মনে, ভুলো না।

সেদিন বাতাসে ছিল তুমি জান

আমারি মনের প্রলাপ জড়ানো,

আকাশে আকাশে আছিল ছড়ানো তোমার হাসির তুলনা।

 

যেতে যেতে পথে পূর্ণিমারাতে চাঁদ উঠেছিল গগনে,

দেখা হয়েছিল তোমাতে আমাতে কী জানি কী মহালগনে।

এখন আমার বেলা নাহি আর,

বহিব একাকী বিরহের ভার—

বাঁধিব যে রাখী পরানে তোমার সে রাখী খুলো না, খুলো না॥