শাপমোচন

ঝরে-পড়া বকুলদলে বিছায় বিছানা॥

আজি   দখিন দুয়ার খোলা,

এসো হে আমার বসন্ত, এসো।

দিব   হৃদয়দোলায় দোলা,

এসো হে আমার বসন্ত, এসো।

নব     শ্যামল শোভন রথে

এসো     বকুল-বিছানো পথে,

এসো     বাজায়ে ব্যাকুল বেণু

মেখে     পিয়ালফুলের রেণু,

এসো হে আমার বসন্ত, এসো।

এসো      ঘনপল্লবপুঞ্জে, এসো হে।

এসো      বনমল্লিকাকুঞ্জে, এসো হে।

মৃদু        মধুর মদির হেসে

এসো       পাগল হাওয়ার দেশে—

তোমার     উতলা উত্তরীয়

তুমি       আকাশে উড়ায়ে দিয়ো,

এসো হে আমার বসন্ত, এসো॥

 

চৈত্রসংক্রান্তির রাতে আবার মিলন। মহিষী বললে, “দেখলেম নাচ। যেন মঞ্জরিত শালতরুশ্রেণীতে বসন্তবাতাসের অধৈর্য। যেন চন্দ্রলোকের শুক্লপক্ষে লেগেছে তুফান। কেবল একজন কুশ্রী কেন রসভঙ্গ করলে। ও যেন রাহুর অনুচর। কী গুণে ও পেল প্রবেশের অধিকার।”

রাজা স্তব্ধ হয়ে রইল। তার পরে উঠল গেয়ে, “অসুন্দরের পরম বেদনায় সুন্দরের আহ্বান। সূর্যরশ্মি কালো মেঘের ললাটে পরায় ইন্দ্রধনু,তার লজ্জাকে সান্ত্বনা দেবার তরে। মর্তের অভিশাপে স্বর্গের করুণা যখন নামে তখনি তো সুন্দরের আবির্ভাব। প্রিয়তমে,সেই করুণাই কি তোমার হৃদয়কে কাল মধুর করে নি।”

“না মহারাজ,না” বলে মহিষী দুই হাতে মুখ ঢাকলে।

রাজার কণ্ঠের সুরে লাগল অশ্রুর ছোঁওয়া। বললে, “যাকে দয়া করলে যেত তোমার হৃদয় ভরে,তাকে ঘৃণা করে কেন পাথর করলে মনকে।”

“রসবিকৃতির পীড়া সইতে পারি নে” বলে মহিষী উঠে পড়ল আসন থেকে। রাজা হাত ধরে বললে,“একদিন সইতে পারবে আপনারই আন্তরিক রসের দাক্ষিণ্যে। কুশ্রীর আত্মত্যাগে সুন্দরের সার্থকতা।”

ভ্রূ কুটিল করে মহিষী বললে, “অসুন্দরের জন্যে তোমার এই অনুকম্পার অর্থ বুঝি নে। ঐ শোনো,উষার প্রথম কোকিলের ডাক। অন্ধকারের মধ্যে তার আলোকের অনুভূতি। আজ সূর্যোদয়মুহূর্তে তোমারও প্রকাশ হোক আমার দিনের মধ্যে,এই আশায়