প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
অক্ষয়। না না, রাগারাগি না। আচ্ছা, যা বল তাই শুনব। খাতায় নাম লিখিয়ে তোমার ঠাট্টানিবারণী সভার সভ্য হব। তোমার সামনে কোনো রকমের বেয়াদবি করব না। তা, কী কথা হচ্ছিল। শ্যালীদের বিবাহ। উত্তম প্রস্তাব।
পুরবালা। দেখো, এখন বাবা নেই। মা তোমারই মুখ চেয়ে আছেন। তোমারই কথা শুনে এখনো তিনি বেশি বয়স পর্যন্ত মেয়েদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। এখন যদি সৎপাত্র না জুটিয়ে দিতে পার তা হলে কী অন্যায় হবে ভেবে দেখো দেখি।
অক্ষয়। আমি তো তোমাকে বলেইছি তোমরা কোনো ভাবনা কোরো না। আমার শ্যালীপতিরা গোকুলে বাড়ছেন।
পুরবালা। গোকুলটি কোথায়।
অক্ষয়। যেখান থেকে এই হতভাগ্যকে তোমার গোষ্ঠে ভর্তি করেছ। আমাদের সেই চিরকুমার-সভা।
পুরবালা। প্রজাপতির সঙ্গে তাদের যে লড়াই।
অক্ষয়। দেবতার সঙ্গে লড়াই করে পারবে কেন। তাঁকে কেবল চটিয়ে দেয় মাত্র। সেইজন্যে ভগবান প্রজাপতির বিশেষ ঝোঁক ঐ সভাটার উপরেই। সরা-চাপা হাঁড়ির মধ্যে মাংস যেমন গুমে গুমে সিদ্ধ হতে থাকে প্রতিজ্ঞার মধ্যে চাপা থেকে সভ্যগুলিও একেবারে হাড়ের কাছ পর্যন্ত নরম হয়ে উঠেছেন, দিব্যি বিবাহযোগ্য হয়ে এসেছেন— এখন পাতে দিলেই হয়। আমিও তো এক কালে ঐ সভার সভাপতি ছিলুম।
পুরবালা। তোমার কী রকম দশাটা হয়েছিল।
অক্ষয়। সে আর কী বলব। প্রতিজ্ঞা ছিল স্ত্রী শব্দ পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করব না, কিন্তু শেষকালে এমনি হল যে মনে হত শ্রীকৃষ্ণের ষোলো-শো গোপিনী যদি বা সম্প্রতি দুষ্প্রাপ্য হন অন্তত মহাকালীর চৌষট্টি হাজার যোগিনীর সন্ধান পেলেও একবার পেট ভরে প্রেমালাপটা করে নিই— ঠিক সেই সময়টাতেই তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হল আর-কি!
পুরবালা। চৌষট্টি হাজারের শখ মিটল?
অক্ষয়। সে আর তোমার মুখের সামনে বলব না। জাঁক হবে। তবে ইশারায় বলতে পারি, মা কালী দয়া করেছেন বটে।
পুরবালা। তবে আমিও বলি, বাবা ভোলানাথের নন্দীভৃঙ্গীর অভাব ছিল না, আমাকে বুঝি তিনি দয়া করেছিলেন।
অক্ষয়। তা হতে পারে, সেইজন্যেই কার্তিকটি পেয়েছ।
পুরবালা। আবার ঠাট্টা শুরু হল?
অক্ষয়। কার্তিকের কথাটা বুঝি ঠাট্টা? গা ছুঁয়ে বলছি, ওটা আমার অন্তরের বিশ্বাস।
শৈলবালা। মুখুজ্জেমশায়, এইবার তোমার ছোটো দুটি শ্যালীকে রক্ষা করো।
অক্ষয়। যদি অরক্ষণীয়া হয়ে থাকেন তো আমি আছি। ব্যাপারটা কী।
শৈলবালা। মার কাছে তাড়া খেয়ে রসিকদাদা কোথা থেকে একজোড়া কুলীনের ছেলে এনে হাজির করেছেন, মা স্থির করেছেন তাদের সঙ্গেই তাঁর দুই মেয়ের বিবাহ দেবেন।
অক্ষয়। ওরে বাস রে। একেবারে বিয়ের এপিডেমিক। প্লেগের মতো। এক বাড়িতে একসঙ্গে দুই কন্যেকে আক্রমণ। ভয় হয় পাছে আমাকেও ধরে!