পরিত্রাণ

বসন্ত। কেন, কেন। অভিমান করেছে বুঝি? সেটা মিছে অভিমান, রামমোহন, সে বেশিক্ষণ থাকবে না, একটু তুমি সবুর করো।

রামমোহন। তিনি বললেন, ‘ দাদাকে ছেড়ে আজ আমি যেতে পারব না। '

বসন্ত। আহা, সে কথা বলতে পারে বটে।

রামমোহন। বড়ো বুক ফুলিয়ে এসেছিলেম। মহারাজ নিষেধ করেছিলেন।– বলেছিলেন, মালক্ষ্মী আমাকে বড়ো দয়া করেন, আমার কথা ঠেলতে পারবেন না! আমাদের রাজা বললেন, প্রতাপাদিত্যের ঘরের মেয়েকে নিতে পারব না। আমি বললেম, তিনি কি কেবল প্রতাপাদিত্যের ঘরের মেয়ে? আপনার ঘরের রানী নন। শ্বশুরের উপর রাগ করে নিজের সিংহাসনকে অপমান করবেন? এই বলে চলে এসেছি, আজ আমি ফিরব কোন্‌ মুখে?

বসন্ত। বিভাকে দোষ দিয়ো না রামমোহন।

রামমোহন। না খুড়োমহারাজ, আমাদের মহারাজার ভাগ্যকেই দোষ দিই— এমন লক্ষ্মীকে পেয়েও হেলায় হারাতে বসেছেন।

বসন্ত। হারাবে কেন রামমোহন। শুভদিন আসবে, আবার মিলন হবে।

রামমোহন। কুপরামর্শ দেবার লোক যে ঢের আছে। ওরা বলছে যাদবপুরের ঘরের মেয়ে এনে তাকে ওঁর পাটরানী করবে।

বসন্ত। এও কি কখনো সম্ভব? আমাদের বিভাকে ত্যাগ করবে?

রামমোহন। সেই চক্রান্তই হয়েছে, তাই আমি ছুটে এলুম। অপরাধ করলে নিজে, আর যিনি সতীলক্ষ্মী তাঁকে দণ্ড দিলেন। এও কি কখনো সইবে?হোক-না কলি, ধর্ম কি একেবারে নেই। চললুম মহারাজ, আশীর্বাদ করবেন, আমাদের রাজার যেন সুমতি হয়।

বসন্ত। এখানকার বিপদ কেটে গেলে আমি নিজে যাব তোমাদের ওখানে। এমন অন্যায় হতে দেব কেন।

[ রামমোহনের প্রণাম করিয়া প্রস্থান

সীতারামের প্রবেশ

কী সীতারাম, খবর কি?

সীতারাম। কারাগারে আমরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছি, এখনই যুবরাজ বেরিয়ে আসবেন।

বসন্ত। আবার আর-একটা উৎ পাত ঘটবে না তো? একটা ফাঁড়া কাটাতে গিয়ে আর-একটা ফাঁকা ঘাড়ে চাপে যে। আমার ভালো ঠেকছে না।

সীতারাম। কাছেই নৌকো তৈরি আছে খুড়োমহারাজ, তাঁকে নিয়ে এখনই আপনাকে পালাতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো গতি নেই।

বসন্ত। তার আগে বিভার সঙ্গে একবার দেখা করে আসি গে।

সীতারাম। না, তার সময় নেই।

বসন্ত। দেরি করব না সীতারাম, তার সঙ্গে জীবনে আর তো দেখা হবে না।

সীতারাম। তা হলে সমস্ত আমাদের বৃথা হয়ে যাবে। ওই দেখুন, আগুনের শিখা জ্বলে উঠেছে।

বসন্ত। আগুন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে তো রে?

সীতারাম। কারাগারের মধ্যেই আমাদের চর আছে, এই এলেন বলে, দেখুন-না।