গৃহপ্রবেশ

অখিল। আমার আপিস থেকেই হয়েছে— পেয়াদারা বেশভূষা করে প্রায় তৈরি—

হিমি। দেখুন অখিলবাবু, এ হাসির কথা নয়—

অখিল। সে কি আর আমি জানি নে। তোমার কাছে লুকিয়ে কী হবে। এ বাড়িটা দেনায়—

হিমি। না না না— সে হতেই পারবে না— অখিলবাবু, দয়া করবেন—

অখিল। কিন্তু এত ভাবছ কেন? তুমি তো সব জানই। তোমাদের দাদা তো আর বেশিদিন—

হিমি। জানি জানি, দাদা আর থাকবেন না, সেও সহ্য হবে, কিন্তু তাঁর এই বাড়িটিও যদি যায় তা হলে বুক ফেটে মরে যাব। এ যে তাঁর প্রাণের চেয়ে—

অখিল। দেখো, তুমি সাহিত্যে গণিতে লজিকে ক্লাসে পুরো মার্কা পেয়ে থাক, কিন্তু সংসারজ্ঞানে থার্ড্‌ ক্লাসেও পাস করতে পারবে না। বিষয়কর্মে হৃদয় বলে কোনো পদার্থ নেই, ওর নিয়ম—

হিমি। আমি জানি নে। আপনার পায়ে পড়ি, এ বাড়ি আপনাকে বাঁচাতে হবে। আপনার আপিসের—

অখিল। পেয়াদাগুলোকে সাজাতে হবে বাজনদার করে, হাতে দিতে হবে বাঁশি। ল কলেজে লয়তত্ত্বের সব অধ্যায় শিখেছি, কেবল তানলয়ের পালাটা প্র্যাক্‌টিস হয় নি। এটা হয়তো বা তোমার কাছ থেকেই—


মাসির প্রবেশ

মাসি। অখিল, কী হচ্ছে। হিমি কাঁদছে কেন।

অখিল। গৃহপ্রবেশের প্ল্যানে একটু খটকা বেধেছে তাই নিয়ে—

মাসি। তা ওর সঙ্গে এ-সব কথা কেন।

অখিল। ওর দাদা যে ওরই উপরে গৃহপ্রবেশের ভার দিয়েছে, শুনছি কাজটাতে কোনো বাধা না হয়, এইজন্যে এত লোককে ছেড়ে আমাকেই ধরেছে। তা তোমরা যদি সকলেই মনে কর, তা হলে চাই-কি গৃহপ্রবেশের কাজে আমিও কোমর বেঁধে লাগতে পারি। কথাটা বুঝেছ, কাকি?

মাসি। বুঝেছি। শুধু কোমর বাঁধা নয়, বাঁধন আরও পাকা করতে চাও। এখন সে পরামর্শ করবার সময় নয়। আপাতত যতীনকে তুমি আশ্বাস দিয়ো যে তার বাড়িতে কারো হাত পড়বে না।

অখিল। বেশ তো, বললেই হবে পাটের বাজার চড়েছে। এখন এঁকে চোখের জলটা মুছতে বলবেন—


ডাক্তারের প্রবেশ

ডাক্তার। উকিল যে! তবেই হয়েছে।

অখিল। দেখুন, শনি বড়ো না কলি বড়ো, তা নিয়ে তর্ক করে লাভ কী। বাংলাদেশে আপনাদের হাত পার হয়েও যে-কটি লোক টিঁকে থাকে, তাদেরই সামান্য শাঁসটুকু নিয়েই আমাদের কারবার—

ডাক্তার। এ ঘরে সে কারবার চালাবার আর বড়ো সময় নেই, দেখে এসেছি।

অখিল। ভয় দেখাবেন না মশায়, মৃত্যুতেই আপনাদের ব্যাবসা খতম, আমাদেরটা ভালো করে জমে তার পর থেকে। না না, থাক্‌ থাক্‌, ও-সব কথা থাক্‌— কাকি, এই বলে যাচ্ছি, গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠানের সমস্ত ভার নিতে রাজি আছি— তার সঙ্গে সঙ্গে উপরি আরো-কিছু ভারও। বাইরের ঘরে থাকব, যখন দরকার হয় ডেকে পাঠিয়ো।

[ প্রস্থান

ডাক্তার। এখনো বউমা এল না। আপনিও তো অনেকক্ষণ ওর ঘরে যান নি।