প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
চন্দ্র। ( জনান্তিকে ইন্দ্রের প্রতি) সপ্তবিংশতির উপর অষ্টবিংশতিতম যোগ হইলে কিরূপ দুর্যোগ উপস্থিত হইতে পারে তাহা, হে শচীপতে, সহজেই অনুভব করিতে পারিবেন। ( শীতলার প্রতি) অয়ি অনবদ্যে—
শীতলা। ( হাসিয়া অস্থির হইয়া) মা গো মা, তুমি এত হাসাতেও পার! আদর করে বেশ নামটি দিয়েছ যা হোক। আনো বদ্যি! কিন্তু বদ্যিতে করবে কী ভাই! কত বদ্যির সাত পুরুষকে আমি সাত ঘাটের জল খাইয়ে এসেছি— আমি কি তেমনি মেয়ে!
ঘেঁটু। ( ইন্দ্রের গায়ের কাছে গিয়া তাঁহার পৃষ্ঠে হাত দিয়া) কী গো, ইন্দিরদা? মুখে যে রা'টি নেই! রেতের বেলা গিন্নির সঙ্গে বকাবকি চুলোচুলি হয়ে গেছে নাকি?
ইন্দ্র। ( সসংকোচে সরিয়া গিয়া দূরস্থ আসন-নির্দেশ-পূর্বক) দেব, আসন গ্রহণে অনুমতি হউক।
ঘেঁটু। এই-যে, এখানে ঢের জায়গা আছে। ( ইন্দ্রের সহিত একাসনে উপবেশন) দাদা, আমার সঙ্গে তুমি নৌকোতা কোরো না। আজ থেকে তুমি আমার দাদা, আমি তোমার ছোটো ভাই ঘেঁটু।
বাহুদ্বারা ইন্দ্রের গলবেষ্টন এবং ইন্দ্রকর্তৃক অব্যক্ত কাতরধ্বনি উচ্চারণ
শীতলা। ( চন্দ্রের প্রতি) তুমি যাও কোথায়?
চন্দ্র। মনোজ্ঞে, অদ্য অন্তঃপুরে দেবীগণ ভর্তৃপ্রসাদনব্রতে তাঁহাদের এই সেবকাধমকে স্মরণ করিয়াছেন, অতএব যদি অনুমতি হয় তবে, হে হরিণশালীননয়নে—
শীতলা। কী বললে? শালী? তা ভাই, তাই সই। তোমার চাঁদমুখে সবই মিষ্টি লাগে। তা, শালী যদি বললে তবে কানমলাটিও খাও।
চন্দ্রের পার্শ্বে একাসনে বসিয়া চন্দ্রের কর্ণপীড়ন
ইন্দ্র। ( চন্দ্রের প্রতি) ভগবন্ সিতকিরণমালিন্, তুমিই ধন্য। করুণস্পর্শে তরুণীকরকিসলয়ের অরুণরাগ এখনো তোমার কর্ণমূলে সংলগ্ন হইয়া আছে।
শীতলা। ( মনসার প্রতি লক্ষ করিয়া স্বগত) মোলো মোলো! আমাদের মন্সে হিংসেয় ফেটে মোলো। আমি চাঁদের পাশে বসেছি, এ আর ওঁর গায়ে সইল না। ঘুর ঘুর করে বেড়াচ্ছে দেখো-না। এতগুলো পুরুষমানুষের সামনে লজ্জাও নেই! মাগী এবার পাড়ায় গিয়ে কত কানাঘুষোই করবে! উনিও বড়ো কসুর করেন নি। কার্তিক-ঠাকুরটিকে নিয়ে যেরকম নিলজ্জপনা করেছে আমি দেখে লজ্জায় মরে যাই আর-কি। কার্তিক কোথায় নুকোবে ভেবে পায় না। ঐ তো চেহারা, ঐ নিয়ে এত ভঙ্গিও করে! মাগো, মাগো, মাগো! (প্রকাশ্যে) আ মর্ মাগী! চাঁদের সামনে দিয়ে অমন বেহায়ার মতো আনাগোনা করছিস কেন? যেন সাপ খেলিয়ে বেড়াচ্ছে! কার্তিকের ওখানে ঠাঁই হল না নাকি?
সুরসভার মধ্যে মনসার ও শীতলার গ্রাম্য ভাষায় তুমুল কলহ
ইন্দ্র। ( শশব্যস্ত হইয়া একবার মনসা ও একবার শীতলার প্রতি) ক্রোধ সংবরণ করো! ক্রোধ সংবরণ করো! অয়ি অসূয়াতাম্রলোচনে, অয়ি গলদ্বেণীবন্ধে, অয়ি বিগলিতদুকূলবসনে, অয়ি কোকিলজিতকূজিতে, তারতর সপ্তম স্বরকে পঞ্চম স্বরে নম্র করিয়া আনো। অয়ি কোপনে—
ঘেঁটু। ( উত্তরীয় ধরিয়া ইন্দ্রকে আসনে বসাইয়া) তুমি এত ব্যস্ত হও কেন দাদা? ওদের এমন রোজ হয়ে থাকে। থাকত