চিরকুমার-সভা

লোচনে হরিণগর্বমোচনে

মা বিদূষয় নতাঙ্গি কজ্জলৈঃ।

সায়কঃ সপদি জীবহারকঃ

কিং পুনর্হি গরলেন লেপিতঃ।


হরিণগর্বমোচন লোচনে

কাজল দিয়ো না, সরলে।

এমনি তো বাণ নাশ করে প্রাণ

কী কাজ লেপিয়া গরলে।

পূর্ণ। থামুন রসিকবাবু। ঐ বুঝি কারা আসছেন।

চন্দ্রবাবু ও নির্মলার প্রবেশ

চন্দ্র। এই - যে অক্ষয়বাবু।

রসিক। আমার সঙ্গে অক্ষয়বাবুর সাদৃশ্য আছে শুনলে তিনি এবং তাঁর আত্মীয়গণ বিমর্ষ হবেন। আমি রসিক।

চন্দ্র। মাপ করবেন রসিকবাবু, হঠাৎ ভ্রম হয়েছিল।

রসিক। মাপ করবার কী কারণ ঘটেছে মশায়। আমাকে অক্ষয়বাবু ভ্রম করে কিছুমাত্র অসম্মান করেন নি। মাপ তাঁর কাছে চাইবেন। — পূর্ণবাবুতে আমাতে এতক্ষণ বিজ্ঞানচর্চা করছিলুম চন্দ্রবাবু।

চন্দ্র। আমাদের কুমার - সভায় আমরা মাসে একদিন করে বিজ্ঞান - আলোচনার জন্যে স্থির করব মনে করছিলুম। আজ কী বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল পূর্ণবাবু।

পূর্ণ। না, সে কিছুই না চন্দ্রবাবু।

রসিক। চোখের দৃষ্টি সম্বন্ধে দু - চার কথা বলাবলি করা যাচ্ছিল।

চন্দ্র। দৃষ্টির রহস্য ভারি শক্ত রসিকবাবু।

রসিক। শক্ত বৈকি। পূর্ণবাবুরও সেই মত।

চন্দ্র। সমস্ত জিনিসের ছায়াই আমাদের দৃষ্টিপটে উল্টো হয়ে পড়ে, সেইটেকে যে কেমন করে আমরা সোজাভাবে দেখি সে সম্বন্ধে কোনো মতই আমার সন্তোষজনক বলে বোধ হয় না।

রসিক। সন্তোষজনক হবে কেমন করে। সোজা দেখা, বাঁকা দেখা, এই - সমস্ত নিয়ে মানুষের মাথা ঘুরে যায়। বিষয়টা বড়ো সংকটময়।

চন্দ্র। নির্মলার সঙ্গে রসিকবাবুর পরিচয় হয় নি। ইনিই আমাদের কুমার - সভার প্রথম স্ত্রীসভ্য।

রসিক। ( নমস্কার করিয়া ) ইনি আমাদের সভার সভালক্ষ্মী। আপনাদের কল্যাণে আমাদের সভায় বুদ্ধিবিদ্যার অভাব ছিল না, ইনি আমাদের শ্রী দান করতে এসেছেন।

চন্দ্র। কেবল শ্রী নয়, শক্তি।

রসিক। একই কথা চন্দ্রবাবু। শক্তি যখন শ্রীরূপে আবির্ভূতা হন তখনই তাঁর শক্তির সীমা থাকে না। কী বলেন পূর্ণবাবু।