চিরকুমার-সভা

পূর্ণ। না।

বিপিন। দেখেছেন এবারে শীতটা ঘোড়দৌড়ের ঘোড়ার মতো সজোরে দৌড়ে মাঘের মাঝামাঝি একেবারে খপ্‌ করে থেমে গেল।

পূর্ণ। হাঁ।

শ্রীশ। এই - যে - পূর্ণবাবু, গেল বারে আপনার শরীর খারাপ ছিল, এবারে বেশ ভালো বোধ হচ্ছে তো?

পূর্ণ। হাঁ।

শ্রীশ। এতদিন কুমার - সভার যে কী একটা মহৎ অভাব ছিল আজ ঘরের মধ্যে ঢুকেই তা বুঝতে পেরেছি, সোনার মুকুটের মাঝখানটিতে কেবল একটি হীরে বসাবার অপেক্ষা ছিল — আজ সেইটি বসানো হয়েছে। কী বলেন পূর্ণবাবু।

পূর্ণ। আপনাদের মতো এমন রচনাশক্তি আমার নেই — আমি এত বানিয়ে বানিয়ে কথা বাঁটতে পারি নে, বিশেষত মহিলাদের সম্বন্ধে।

শ্রীশ। আপনার অক্ষমতার কথা শুনে দুঃখিত হলেম পূর্ণবাবু, আশা করি ক্রমে উন্নতি লাভ করতে পারবেন।

বিপিন। ( রসিককে জনান্তিকে টানিয়া ) দুই বীরপুরুষে যুদ্ধ চলুক, এখন আসুন রসিকবাবু, আপনার সঙ্গে দুই - একটা কথা আছে। দেখুন, সেই খাতা সম্বন্ধে আর কোনো কথা উঠেছিল?

রসিক। অপরাধ করা মানবের ধর্ম আর ক্ষমা করা দেবীর — সে কথাটা আমি প্রসঙ্গক্রমে তুলেছিলেম —

বিপিন। তাতে কী বললেন।

রসিক। কিছু না ব'লে বিদ্যুতের মতো চলে গেলেন।

বিপিন। চলে গেলেন!

রসিক। কিন্তু, সে বিদ্যুতে বজ্র ছিল না।

বিপিন। গর্জন?

রসিক। তাও ছিল না।

বিপিন। তবে?

রসিক। এক প্রান্তে কিংবা অন্য প্রান্তে একটু হয়তো বর্ষণের আভাস ছিল।

বিপিন। সেটুকুর অর্থ?

রসিক। কী জানি মশায়। অর্থও থাকতে পারে, অনর্থও থাকতে পারে।

বিপিন। রসিকবাবু, আপনি কী বলেন আমি কিছু বুঝতে পারি নে।

রসিক। কী করে বুঝবেন — ভারি শক্ত কথা।

শ্রীশ। ( নিকটে আসিয়া ) কী কথা শক্ত মশায়।

রসিক। এই বৃষ্টি - বজ্র - বিদ্যুতের কথা।

শ্রীশ। ওহে বিপিন, তার চেয়ে শক্ত কথা যদি শুনতে চাও তা হলে পূর্ণর কাছে যাও।

বিপিন। শক্ত কথা সম্বন্ধে আমার খুব বেশি শখ নেই ভাই।

শ্রীশ। যুদ্ধ করার চেয়ে সন্ধি করার বিদ্যেটা ঢের বেশি দুরূহ — সেটা তোমার আসে। দোহাই তোমার, পূর্ণকে একটু ঠাণ্ডা করে এসো গে। আমি বরঞ্চ ততক্ষণ রসিকবাবুর সঙ্গে বৃষ্টি - বজ্র - বিদ্যুতের আলোচনা করে নিই।

[ বিপিনের প্রস্থান