চিরকুমার-সভা

রসিকের প্রবেশ

 

অক্ষয়। পিতামহ ভীষ্ম, যুদ্ধের সমস্তই প্রস্তুত?

রসিক। সমস্তই। বীরপুরুষ দুটিও সমাগত।

অক্ষয়। এখন কেবল দিব্যাস্ত্র - দুটি সাজতে গেছেন। তুমি তা হলে সেনাপতির ভার গ্রহণ করো, আমি

একটু অন্তরালে থাকতে ইচ্ছা করি।

রসিক। আমিও প্রথমটা একটু আড়াল হই।

[ রসিক ও অক্ষয়ের প্রস্থান

শ্রীশ ও বিপিনের প্রবেশ

 

শ্রীশ। বিপিন, তুমি তো আজকাল সংগীতবিদ্যার উপর চীৎকারশব্দে ডাকাতি আরম্ভ করেছ— কিছু আদায় করতে পারলে?

বিপিন। কিছু না। সংগীতবিদ্যার দ্বারে সপ্তসুর অনবরত পাহারা দিচ্ছে, সেখানে কি আমার ঢোকবার জো আছে। কিন্তু এ প্রশ্ন কেন তোমার মনে উদয় হল।

শ্রীশ। আজকাল মাঝে মাঝে কবিতায় সুর বসাতে ইচ্ছে করে। সেদিন বইয়ে পড়ছিলুম —

কেন সারা দিন ধীরে ধীরে

বালু নিয়ে শুধু খেল তীরে।

চলে যায় বেলা,    রেখে মিছে খেলা

ঝাঁপ দিয়ে পড়ো কালো নীরে।

অকূল ছানিয়ে যা পাস তা নিয়ে

হেসে কেঁদে চলো ঘরে ফিরে।

— মনে হচ্ছিল এর সুরটা যেন জানি কিন্তু গাবার জো নেই।

বিপিন। জিনিসটা মন্দ নয় হে — তোমার কবি লেখে ভালো। ওহে, ওর পরে আর - কিছু নেই? যদি শুরু করলে তবে শেষ করো।

শ্রীশ। —

নাহি জানি মনে কী বাসিয়া

পথে বসে আছে কে আসিয়া।

যে ফুলের বাসে অলস বাতাসে

হৃদয় দিতেছে উদাসিয়া

যেতে হয় যদি চলো নিরবধি

সেই ফুলবন তলাশিয়া।

বিপিন। বাঃ, বেশ! কিন্তু শ্রীশ, শেল্‌ফের কাছে তুমি কী খুঁজে বেড়াচ্ছ।