কাহিনী

নব ছন্দ ; বেদনায় অন্তর করিয়া বিদারিত

মুহূর্তে নিল যে জন্ম পরিপূর্ণ বাণীর সংগীত,

তারে লয়ে কী করিবে, ভাবে মুনি কী তার উদ্দেশ —

তরুণগরুড়সম কী মহৎ ক্ষুধার আবেশ

পীড়ন করিছে তারে, কী তাহার দুরন্ত প্রার্থনা,

অমর বিহঙ্গশিশু কোন্‌ বিশ্বে করিবে রচনা

আপন বিরাট নীড়। — অলৌকিক আনন্দের ভার

বিধাতা যাহারে দেয়, তার বক্ষে বেদনা অপার,

তার নিত্য জাগরণ ; অগ্নিসম দেবতার দান

ঊর্ধ্বশিখা জ্বালি চিত্তে আহোরাত্র দগ্ধ করে প্রাণ।

 

অস্তে গেল দিনমণি। দেবর্ষি নারদ সন্ধ্যাকালে

শাখাসুপ্ত পাখিদের সচকিয়া জটারশ্মিজালে,

স্বর্গের নন্দনগন্ধে অসময়ে শ্রান্ত মধুকরে

বিস্মিত ব্যাকুল করি, উত্তরিলা তপোভূমি- ' পরে।

নমস্কার করি কবি শুধাইলা সঁপিয়া আসন —

“ কী মহৎ দৈবকার্যে, দেব, তব মর্তে আগমন?”

নারদ কহিলা হাসি, “করুণার উৎসমূখে, মুনি,

যে ছন্দ উঠিল ঊর্ধ্বে, ব্রহ্মলোকে ব্রহ্মা তাহা শুনি

আমারে কহিলা ডাকি, যাও তুমি তমসার তীরে,

বাণীর-বিদ্যুৎ-দীপ্ত ছন্দোবাণ-বিদ্ধ বাল্মীকিরে

বারেক শুধায়ে এসো — বোলো তারে, ‘ ওগো ভাগ্যবান্‌,

এ মহা সংগীতধন কাহারে করিবে তুমি দান।

এই ছন্দে গাঁথি লয়ে কোন্‌ দেবতার যশঃকথা

স্বর্গের অমরে কবি মর্তলোকে দিবে অমরতা?' ”

কহিলেন শির নাড়ি ভাবোন্মত্ত মহামুনিবর,

“দেবতার সামগীতি গাহিতেছে বিশ্বচরাচর,

ভাষাশূন্য, অর্থাহারা। বহ্নি ঊর্ধ্বে মেলিয়া আঙ্গুলি

ইঙ্গিতে করিছে স্তব ; সমুদ্র তরঙ্গবাহু তুলি

কী কহিছে স্বর্গ জানে ; অরণ্য উঠায়ে লক্ষ শাখা

মর্মরিছে মহামন্ত্র ; ঝটিকা উড়ায়ে রুদ্র পাখা

গাহিছে গর্জনগান ; নক্ষত্রের অক্ষৌহিণী হতে