প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
ক্ষান্তমণি। ঢের হয়েছে গোঁসাইঠাকুর, আর ধর্মোপদেশ দিতে হবে না। আমাকে তোমার পছন্দ হয় না, না?
চন্দ্রকান্ত। কে বললে পছন্দ হয় না?
ক্ষান্তমণি। আমি গদ্য, আমি পদ্য নই, আমি শোলোক পড়ি নে, আমি বেলফুলের মালা পরাই নে —
চন্দ্রকান্ত। আমি গললগ্নীকৃতবস্ত্র হয়ে বলছি, দোহাই তোমার, তুমি শোলোক পোড়ো না, তুমি মালা পরিয়ো না, ওগুলো সবাইকে মানায় না —
ক্ষান্তমণি। কী বললে?
চন্দ্রকান্ত। আমি বললুম যে, বেলফুলের মালা আমাকে মানায় না, তার চেয়ে সাফ চাদরে ঢের বেশি শোভা হয় — পরীক্ষা করে দেখো।
ক্ষান্তমণি। যাও যাও, আর ঠাট্টা ভালো লাগে না।
চন্দ্রকান্ত। ( নিকটে আসিয়া) কথাটা বুঝলে না ভাই? কেবল রাগই করলে! শোনো বুঝিয়ে দিচ্ছি —
ভালোবাসার থার্মোমিটারে তিন মাত্রার উত্তাপ আছে। মানুষ যখন বলে ‘ ভালোবাসি নে ' সেটা হল ৯৫ ডিগ্রি, যাকে বলে সাবনর্মাল। যখন বলে ‘ ভালোবাসি ' সেটা হল নাইন্টিএইট পয়েন্ট ফোর, ডাক্তাররা তাকে বলে নর্মাল, তাতে একেবারে কোনো বিপদ নেই। কিন্তু প্রেমজ্বর যখন ১০৫ ছাড়িয়ে গেছে তখন রুগি আদর করে বলতে শুরু করেছে ‘ পোড়ারমুখি ', তখন চন্দ্রবদনীটা একেবারে সাফ ছেড়ে দিয়েছে। যারা প্রবীণ ডাক্তার তারা বলে এইটেই হল মরণের লক্ষণ। বড়োবউ, নিশ্চয় জেনো, বন্ধুমহলে আমিও যখন প্রলাপ বকি, তোমাকে যা না বলবার তাই বলি, তখন সেটা প্রণয়ের ডিলিরিয়ম, তখন বাঁধা আদরের ভাষায় একেবারে কুলোয় না ; গাল দিতে না পারলে ভালোবাসার ইস্টিমের চাপে বুক ফেটে যায়, বিশ্রী রকমের অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে। নাড়ী রসস্থ হলে তাতে ভাষা যে কিরকম এলোমেলো হয়ে ওঠে, তা সেই ডাক্তারই বোঝে রসবোধের যে একেবারে এম.ডি.।
ক্ষান্তমণি। রক্ষে করো, আমার অত ডাক্তারি জানা নেই।
চন্দ্রকান্ত। সে তো ব্যবহারেই বুঝতে পারি নইলে লয়াল্টিকে সিডিশন বলে সন্দেহ করবে কেন। কিন্তু নিশ্চয় রুগির দশা তোমাকেও মাঝে মাঝে ধরে। আচ্ছা, কলতলায় দাঁড়িয়ে তুমি কখনো পদ্মঠাকুরঝিকে বলো নি — আমার এমনি কপাল যে বিয়ে করে ইস্তিক সুখ কাকে বলে একদিনের তরে জানলুম না? আমার কানে যদি সে কথা আসত তা হলে আনন্দে শরীর রোমাঞ্চিত হয়ে উঠত।
ক্ষান্তমণি। আমি পদ্মঠাকুরঝিকে কখ্খনো অমন কথা বলি নি।
চন্দ্রকান্ত। আচ্ছা, তা হলে সাফ চাদরটা এনে দাও।
ক্ষান্তমণি। (চাদর আনিয়া দিয়া) তুমি বাইরে বেরোচ্ছ যদি, চুলগুলো কাগের বাসার মতো করে বেরিয়ো না। একটু বোসো, তোমার চুল ঠিক করে দিই।
চন্দ্রকান্ত। হয়েছে, হয়েছে।
ক্ষান্তমণি। না হয় নি, একদন্ড মাথা স্থির করে রাখো দেখি।
চন্দ্রকান্ত। তোমার সামনে আমার মাথার ঠিক থাকে না, দেখতে দেখতে ঘুরে যায়—
ক্ষান্তমণি। অত ঠাট্টায় কাজ কী! নাহয় আমার রূপ নেই, গুণ নেই—একটা ললিতলবঙ্গলতা খোঁজ করে আনো গে, আমি চললুম।
[ চিরুনি ব্রুস ফেলিয়া দ্রুত প্রস্থান
চন্দ্রকান্ত। এখন আর সময় নেই, ফিরে এসে রাগ ভাঙাতে হবে।