প্রায়শ্চিত্ত

মহিষী। ওষুধ খেয়েছে বুঝি। বিপদ কিছু ঘটবে না তো? যে যা বলুক, বউমা কিন্তু লক্ষ্মী মেয়ে। ওকে এমন জোর করে বিদায় করলে কি ধর্মে সইবে? বামী, বামী!

বামীর প্রবেশ

বামী। কী মা।

মহিষী। ওষুধটা কি বড্ড কড়া হয়েছে?

বামী। তুমি তো কড়া ওষুধের কথাই বলেছিলে।

মহিষী। কিন্তু বিপদ ঘটবে না তো?

বামী। আপদবিপদের কথা বলা যায় কি?

মহিষী। সত্যি বলছি বামী, আমার মনটা কেমন করছে। ওষুধটা কি খেয়েছে- ঠিক জানিস?

বামী। বেশিক্ষণ নয়— এই খানিকক্ষণ হল খেয়েছে।

মহিষী। দেখলুম, মুখ একেবারে সাদা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। কী করলুম কে জানে। হরি রক্ষা করো।

বামী। তোমরা তো ওকে বিদায় করতেই চেয়েছিলে!

মহিষী। না না, ছি ছি— অমন কথা বলিস নে। দেখ্‌ আমি তোকে আমার এই গলার হারগাছাটা দিচ্ছি, তুই শিগগির দৌড়ে গিয়ে মঙ্গলার কাছ থেকে এর উলটো ওষুধ নিয়ে আয় গে। যা বামী, যা! শিগগির যা!

[ বামীর প্রস্থান

বিভার সরোদনে প্রবেশ

বিভা। মা মা, কী হল মা?

মহিষী। কী হয়েছে বিভু।

বিভা। বউদিদির এমন হল কেন মা। তোমরা তাকে কী করলে মা? কী খাওয়ালে?

মহিষী। ( উচ্চস্বরে) ওরে, বামী, বামী, শিগগির দৌড়ে যা— ওরে ওষুধ নিয়ে আয়।

উদয়াদিত্যের প্রবেশ

মহিষী। বাবা, উদয়, কী হয়েছে বাপ।

উদয়াদিত্য। সুরমা বিদায় হয়েছে মা, এবার আমি বিদায় হতে এসেছি— আর এখানে নয়।

মহিষী। ( কপালে করাঘাত করিয়া) কী সর্বনাশ হল রে, কী সর্বনাশ হল।

উদয়াদিত্য। ( প্রণাম করিয়া) চললুম তবে।

মহিষী। ( হাত ধরিয়া) কোথায় যাবি বাপ? আমাকে মেরে ফেলে দিয়ে যা।

বিভা। ( পা জড়াইয়া) কোথায় যাবে দাদা। আমাকে কার হাতে দিয়ে যাবে?

উদয়াদিত্য। তোকে কার হাতে দিয়ে যাব। আমি হতভাগা ছাড়া তোর কে আছে? ওরে বিভা, তুই-ই আমাকে টেনে রাখলি— নইলে এ পাপ-বাড়িতে আমি আর এক মুহূর্ত থাকতুম না।

বিভা। বুক ফেটে গেল দাদা, বুক ফেটে গেল।

উদয়াদিত্য। দুঃখ করিস নে বিভা, যে গেছে সে সুখে গেছে। এবাড়িতে এসে সেই সোনার লক্ষ্মী এই আজ প্রথম আরাম পেল।