রাজা ও রানী

দ্বিতীয় সৈনিক। ওরে, যুবরাজ তো আমাদেরই। স্বর্গীয় মহারাজ তাকে আমাদেরই হাতে দিয়ে গেছেন। আমরা তাকে কাঁধে করে ঢাক বাজিয়ে রাজা করে দেব। তা কাউকে ভয় করব না —

প্রথম সৈনিক। খুড়ো-মহারাজকে গিয়ে বলব, তুমি নেমে এসো, আমরা রাজপুত্তুরকে সিংহাসনে চড়িয়ে আনন্দ করতে চাই।

দ্বিতীয় সৈনিক। শুনেছিস, পূর্ণিমা তিথিতে যুবরাজের বিয়ে?

প্রথম সৈনিক। সে তো পাঁচ বৎসর ধরে শুনে আসেছি।

দ্বিতীয় সৈনিক। এইবার পাঁচ বৎসর পূর্ণ হয়ে গেছে। ত্রিচূড়ের রাজবংশে নিয়ম চলে আসছে যে, পাঁচ বৎসর রাজকন্যার অধীন হয়ে থাকতে হবে। তার পর তার হুকুম হলে বিয়ে হবে।

প্রথম সৈনিক। বাবা, এ আবার কী নিয়ম! আমরা ক্ষত্রিয়, আমাদের চিরকাল চলে আসছে শ্বশুরের গালে চড় মেরে মেয়েটার ঝুঁটি ধরে টেনে নিয়ে আসি — ঘণ্টা দুয়ের মধ্যে সমস্ত পরিষ্কার হয়ে যায়। তার পরে দশটা বিয়ে করবার ফুরসৎ পাওয়া যায়।

দ্বিতীয় সৈনিক। যোধমল, সেদিন কী করবি বল্‌ দেখি।

প্রথম সৈনিক। সেদিন আমিও আর-একটা বিয়ে করে ফেলব।

দ্বিতীয় সৈনিক। শাবাশ বলেছিস রে ভাই!

প্রথম সৈনিক। মহিচাঁদের মেয়ে! খাসা দেখতে ভাই! কী চোখ রে! সে দিন বিতস্তায় জল আনতে যাচ্ছিল, দুটো কথা বলতে গেলুম, কঙ্কণ তুলে মারতে এল। দেখলুম চোখের চেয়ে তার কঙ্কণ ভয়ানক। চট‍্পট‍্ সরে পড়তে হল।

গান

ওই আঁখি রে!

ফিরে ফিরে চেয়ো না চেয়ো না, ফিরে যাও

কী আর রেখেছ বাকি রে!

মরমে কেটেছ সিঁধ, নয়নের কেড়েছ নিদ —

কী সুখে পরান আর রাখি রে!

দ্বিতীয় সৈনিক। শাবাশ ভাই!

প্রথম সৈনিক। ঐ দেখ্‌ শংকরদাদা। যুবরাজ এখানে নেই — তবু বুড়ো সাজ-সজ্জা করে সেই দুয়োরে বসে আছে। পৃথিবী যদি উলট-পালট হয়ে যায় তবু বুড়োর নিয়মের ত্রুটি হবে না।

দ্বিতীয় সৈনিক। আয় ভাই ওকে যুবরাজের দুটো কথা জিজ্ঞাসা করা যাক।

প্রথম সৈনিক। জিজ্ঞাসা করলে ও কি উত্তর দেবে? ও তেমন বুড়ো নয়। যেন ভরতের রাজত্বে রামচন্দ্রের জুতোজোড়াটার মতো পড়ে আছে, মুখে কথাটি নেই।

দ্বিতীয় সৈনিক। ( শংকরের নিকটে গিয়া) হাঁ দাদা, বলো না দাদা, যুবরাজ রাজা হবে কবে?

শংকর। তোদের সে খবরে কাজ কী।

প্রথম সৈনিক। না না, বলছি আমাদের যুবরাজের বয়স হয়েছে, এখন খুড়ো-রাজা নাবছে না কেন?