গৃহপ্রবেশ

যতীন। ছি ছি বোন, তোর বউদিদির সঙ্গে আজ পর্যন্ত তোর ভালো বনল না, এটা আমার—

হিমি। ননদ যে আমি— তাই হয়তো—

যতীন। তুই বুঝি শাস্ত্র মিলিয়ে ভাব করিস, রাগ করিস?

হিমি। হাঁ দাদা, সেই-যে হিন্দি গানে আছে— ননদিয়া রহি জাগি—

যতীন। তুই বুঝি সেটাকে একটু বদলে নিয়ে করেছিস— ননদিয়া রহি রাগি।

হিমি। হাঁ দাদা, সুরে খারাপ শুনতে হয় না (গাহিয়া) ননদিয়া রহি রাগি—

যতীন। কিন্তু বেসুর করিস নে, বোন।

হিমি। সে কি হয়। তোমার কাছেই তো সুর শেখা।

যতীন। ঐরে, আজই যতসব কাজের লোকের ভিড় দেখছি। নরেনখাঁ’র লোক দেউড়ির কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হিমি এক কাজ কর্ তো— কোনোরকম করে আভাসে খবর নিতে পারিস? এখনকার বাজারে— না না, থাক্‌গে। ঐ দরজাটা বন্ধ করে দে।

পাশের ঘরে

মাসি। এ কী, বউ। কোথাও যাচ্ছ নাকি।

মণি। সীতারামপুরে যাব।

মাসি। সে কী কথা। কার সঙ্গে যাবে।

মণি। অনাথ নিয়ে যাচ্ছে।

মাসি। লক্ষ্মী, মা আমার, যেয়ো তুমি যেয়ো— তোমাকে বারণ করব না। কিন্তু আজ না।

মণি। টিকিট কিনে গাড়ি রিজার্ভ হয়ে গেছে। মা খরচ পাঠিয়েছেন।

মাসি। তা হোক, ও লোকসান গায়ে সইবে। নাহয় তুমি কাল ভোরের গাড়িতেই যেয়ো। আজ রাত্তিরটা—

মণি। মাসি, আমি তোমাদের তিথি-বার মানি নে। আজ গেলে দোষ কী।

মাসি। যতীন তোমাকে ডেকেছে, তোমার সঙ্গে তার একটু বিশেষ কথা আছে।

মণি। বেশ তো, এখনো দশ মিনিট সময় আছে, আমি তাঁকে বলে আসছি।

মাসি। না, তুমি বলতে পারবে না যে যাচ্ছ।

মণি। তা বলব না,কিন্তু দেরি করতে পারব না। কালই অন্নপ্রাশন, আজ না গেলে চলবেই না।

মাসি। জোড়হাত করছি বউ, আমার কথা একদিনের মতো রাখো। মন একটু শান্ত করে যতীনের কাছে বোসো। তাড়াতাড়ি কোরো না।

মণি। তা কী করব বলো। গাড়ি তো বসে থাকবে না। অনাথ চলে গেছে। এখনই সে এসে আমায় নিয়ে যাবে। এইবেলা তাঁর সঙ্গে দেখা সেরে আসিগে।

মাসি। না, তবে থাক্‌, তুমি যাও। এমন করে তার কাছে যেতে দেব না। ওরে অভাগিনী, যতদিন বেঁচে থাকবি এদিনের কথা তোকে চিরকাল মনে রাখতে হবে।

মণি। মাসি, আমাকে অমন করে শাপ দিয়ো না বলছি।

মাসি। ওরে বাপ রে, আর কেন বেঁচে আছিস রে বাপ। দুঃখের যে শেষ নেই, আমি আর ঠেকিয়ে রাখতে পারলুম না।

[ মণির প্রস্থান