চিরকুমার-সভা

ঘরের অন্যত্র

বিপিন। রসিকবাবু, আচ্ছা, আপনার কি মনে হয়, ও গানটা তিনি বিশেষ কিছু মনে করে লিখেছেন।

রসিক। হতেও পারে। আপনি আমাকে সুদ্ধ ধোঁকা লাগিয়ে দিলেন যে। পূর্বে ওটা ভাবি নি।

বিপিন। —

তরী আমার হঠাৎ ডুবে যায়

কোন্‌ পাথারে কোন্‌ পাষাণের ঘায়।

— আচ্ছা রসিকবাবু, এখানে তরী বলতে ঠিক কী বোঝাচ্ছে।

রসিক। হৃদয় বোঝাচ্ছে তার আর সন্দেহ নেই। তবে ঐ পাথরটা কোথায় আর পাষাণটা কে সেইটেই ভাববার বিষয়।

পূর্ণ। ( নিকটে আসিয়া ) বিপিনবাবু, মাপ করবেন — রসিকবাবুর সঙ্গে আমার একটি কথা আছে — যদি —

বিপিন। বেশ, বলুন, আমি যাচ্ছি।

[ রসিকের নিকট হইতে প্রস্থান

পূর্ণ। আমার মতো নির্বোধ জগতে নেই রসিকবাবু।

রসিক। আপনার চেয়ে ঢের নির্বোধ আছে যারা নিজেকে বুদ্ধিমান বলে জানে — যথা আমি।

পূর্ণ। একটু নিরালা পাই যদি আপনার সঙ্গে অনেক কথা আছে, সভা ভেঙে গেলে আজ রাত্রে একটু অবসর করতে পারেন?

রসিক। বেশ কথা।

পূর্ণ। আজ দিব্য জ্যোৎস্না আছে, গোলদিঘির ধারে — কী বলেন।

রসিক। ( স্বগত ) কী সর্বনাশ।

শ্রীশ। ( নিকটে আসিয়া ) ওঃ, পূর্ণবাবু কথা কচ্ছেন বুঝি? আচ্ছা, এখন থাক্‌। রাত্রে আপনার অবসর হবে রসিকবাবু?

রসিক। তা হতে পারে।

শ্রীশ। তা হলে কালকের মতো — কী বলেন। কাল দেখলেন তো ঘরের চেয়ে পথে জমে ভালো।

রসিক। জমে বৈকি। ( স্বগত ) সর্দি জমে, কাশি জমে, গলার স্বর দইয়ের মতো জমে যায়।

[ শ্রীশের প্রস্থান

পূর্ণ। আচ্ছা রসিকবাবু, আপনি হলে কী বলে কথা আরম্ভ করতেন।

রসিক। হয়তো বলতুম — সেদিন বেলুন উড়েছিল, আপনাদের বাড়ির ছাত থেকে দেখতে পেয়েছিলেন কি।

পূর্ণ। তিনি যদি বলতেন, হাঁ —

রসিক। আমি বলতুম, মনকে ওড়বার অধিকার দিয়েছেন বলেই ঈশ্বর মানুষের শরীরে পাখা দেন নি, শরীরকে বদ্ধ রেখে বিধাতা মনের আগ্রহ কেবল বাড়িয়ে দিয়েছেন।

পূর্ণ। বুঝেছি রসিকবাবু — চমৎকার — এর থেকে অনেক কথার সৃষ্টি হতে পারে।

বিপিন। ( নিকটে আসিয়া ) পূর্ণবাবুর সঙ্গে কথা হচ্ছে? থাক্‌ তবে, আমাদের সেই যে একটা কথা ছিল সেটা আজ রাত্রে হবে, কী বলেন।

রসিক। সেই ভালো।