ঋণশোধ

সন্ন্যাসী। সব সময়ে কি তাকে বিশ্বাস করা যায়?

লক্ষেশ্বর। সেই তো মুশকিলের কথা। আমি দেখছি, এটা মাটিতেই পোঁতা থাকবে, হঠাৎ কোন্‌দিন মরে যাব, কেউ সন্ধানও পাবে না।

সন্ন্যাসী। রাজাও না, সম্রাটও না, ঐ মাটিই সব ফাঁকি দিয়ে নেবে। তোমাকেও নেবে, আমাকেও নেবে।

লক্ষেশ্বর। তা নিক গে, কিন্তু আমার কেবলই ভাবনা হয়, আমি মরে গেলে কোথা থেকে কে এসে হঠাৎ খুঁড়তে খুঁড়তে ওটা পেয়ে যাবে। যাই হোক ঠাকুর, কিন্তু তোমার মুখে ওই সোনার পদ্মর কথাটা আমার কাছে বড়ো ভালো লাগে। আমার কেমন মনে হচ্ছে ওটা তুমি হয়তো খুঁজে বের করতে পারবে। কিন্তু তা হোক গে, আমি তোমার চেলা হতে পারব না। প্রণাম।

[ প্রস্থান
ঠাকুরদাদা ও শেখরের প্রবেশ

সন্ন্যাসী। ওহে পরদেশী, তুমি তো মানুষের ভিতরকার মতলব সব দেখতে পাও। তুমি জান আমি বেরিয়েছিলুম বিশ্বের ঋণ শোধ করতে।

ঠাকুরদাদা। কী ঋণ প্রভু, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন না?

সন্ন্যাসী। আনন্দের ঋণ ঠাকুরদা। শরতে যে সোনার আলোয় সুধা ঢেলে দিয়েছে —তার শোধ করতে চাই যদি তো হৃদয় ঢেলে দিতে হবে। ওহে উদাসী, তুমি বল কী?

শেখর।

গান
দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া     তোমায় আমায় জনম জনম এই চলেছে     মরণ কভু তারে থামায়? যখন     তোমার গানে আমি জাগি          আকাশে চাই তোমার লাগি, আবার    একতারাতে আমার গানে          মাটির পানে তোমায় নামায়। ওগো    তোমার সোনার আলোর ধারা          তার ধারি ধার, আমার     কালো মাটির ফুল ফুটিয়ে          শোধ করি তার। আমার     শরৎ-রাতের শেফালি বন          সৌরভেতে মাতে যখন, তখন    পালটা সে তান লাগে তব          শ্রাবণ-রাতের প্রেম-বরিষায়।