আত্মপরিচয় ১

এসেছি নূতন দেশে।

কখনো উদার গিরির শিখরে

কভু বেদনার তমোগহ্বরে

চিনি না যে পথ সে পথের'পরে

চলেছি পাগলবেশে।

এই যে কবি, যিনি আমার সমস্ত ভালোমন্দ, আমার সমস্ত অনুকূল ও প্রতিকূল উপকরণ লইয়া আমার জীবনকে রচনা করিয়া চলিয়াছেন, তাঁহাকেই আমার কাব্যে আমি ‘জীবনদেবতা' নাম দিয়াছি। তিনি যে কেবল আমার এই ইহজীবনের সমস্ত খণ্ডতাকে ঐক্যদান করিয়া বিশ্বের সহিত তাহার সামঞ্জস্যস্থাপন করিতেছেন, আমি তাহা মনে করি না। আমি জানি, অনাদিকাল হইতে বিচিত্র বিস্মৃত অবস্থার মধ্য দিয়া তিনি আমাকে আমার এই বর্তমান প্রকাশের মধ্যে উপনীত করিয়াছেন — সেই বিশ্বের মধ্য দিয়া প্রবাহিত অস্তিত্বধারার বৃহৎ স্মৃতি তাঁহাকে অবলম্বন করিয়া আমার অগোচরে আমার মধ্যে রহিয়াছে। সেইজন্য এই জগতের তরুলতা-পশুপক্ষীর সঙ্গে এমন একটা পুরাতন ঐক্য অনুভব করিতে পারি, সেইজন্য এতবড়ো রহস্যময় প্রকাণ্ড জগৎকে অনাত্মীয় ও ভীষণ বলিয়া মনে হয় না।

আজ মনে হয় সকলেরি মাঝে

তোমারেই ভালোবেসেছি ;

জনতা বাহিয়া চিরদিন ধরে

শুধু তুমি আমি এসেছি।

চেয়ে চারি দিক পানে

কী যে জেগে ওঠে প্রাণে —

তোমার-আমার অসীম মিলন

যেন গো সকলখানে।

কত যুগ এই আকাশে যাপিনু

সে কথা অনেক ভুলেছি,

তারায় তারায় যে আলো কাঁপিছে

সে আলোকে দোঁহে দুলেছি।

 

তৃণরোমাঞ্চ ধরণীর পানে

আশ্বিনে নব-আলোকে

চেয়ে দেখি যবে আপনার মনে

প্রাণ ভরি উঠে পুলকে।

মনে হয় যেন জানি

এই অকথিত বাণী —

মূক মেদিনীর মর্মের মাঝে