আত্মপরিচয় ৩

এমন যে দান এ পেয়ে কি আর শান্তিতে থাকবার জো আছে। শান্তি যে বন্ধন যদি তাকে অশান্তির ভিতর দিয়ে না পাওয়া যায়।

আজকে হতে জগৎমাঝে

ছাড়ব আমি ভয়,

আজ হতে মোর সকল কাজে

তোমার হবে জয় —

আমি ছাড়ব সকল ভয়।

মরণকে মোর দোসর করে

রেখে গেছ আমার ঘরে,

আমি তারে বরণ করে

রাখব পরানময়।

তোমার তরবারি আমার

করবে বাঁধন ক্ষয়।

আমি ছাড়ব সকল ভয়।

এমন আরো অনেক গান উদ্‌ধৃত করা যেতে পারে যাতে বিরাটের সেই অশান্তির সুর লেগেছে। কিন্তু সেই সঙ্গে এ কথা মানতেই হবে সেটা কেবল মাঝের কথা, শেষের কথা নয়। চরম কথাটা হচ্ছে শান্তং শিবমদ্বৈতম্‌। রুদ্রতাই যদি রুদ্রের চরম পরিচয় হত তা হলে সেই অসম্পূর্ণতায় আমাদের আত্মা কোনো আশ্রয় পেত না — তা হলে জগৎ রক্ষা পেত কোথায়। তাই তো মানুষ তাঁকে ডাকছে, রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্‌ — রুদ্র, তোমার যে প্রসন্ন মুখ, তার দ্বারা আমাকে রক্ষা করো। চরম সত্য এবং পরম সত্য হচ্ছে ঐ প্রসন্ন মুখ। সেই সত্যই হচ্ছে সকল রুদ্রতার উপরে। কিন্তু সেই সত্যে পৌঁছতে গেলে রুদ্রের স্পর্শ নিয়ে যেতে হবে। রুদ্রকে বাদ দিয়ে যে প্রসন্নতা, অশান্তিকে অস্বীকার করে যে শান্তি, সে তো স্বপ্ন, সে সত্য নয়।

বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি,

সে কি সহজ গান।

সেই সুরেতে জাগব আমি

দাও মোরে সেই কান।

ভুলব না আর সহজেতে,

সেই প্রাণে মন উঠবে মেতে

মৃত্যুমাঝে ঢাকা আছে

যে অন্তহীন প্রাণ।

সে ঝড় যেন সই আনন্দে

চিত্তবীণার তারে

সপ্ত সিন্ধু দশ দিগন্ত

নাচাও যে ঝংকারে।