আত্মপরিচয় ৩

মরতে মরতে মরণটারে

শেষ করে দে একেবারে,

তার পরে সেই জীবন এসে

আপন আসন আপনি লবে।

মানুষ জেনেছে —

নয় এ মধুর খেলা,

তোমায় আমায় সারাজীবন

সকাল-সন্ধ্যাবেলা।

কতবার যে নিবল বাতি,

গর্জে এল ঝড়ের রাতি,

সংসারের এই দোলায় দিলে

সংশয়েরি ঠেলা।

বারে বারে বাঁধ ভাঙিয়া,

বন্যা ছুটেছে,

দারুণ দিনে দিকে দিকে,

কান্না উঠেছে।

ওগো রুদ্র, দুঃখে সুখে,

এই কথাটি বাজল বুকে —

তোমার প্রেমে আঘাত আছে

নাইকো অবহেলা।

আমার ধর্ম কী, তা যে আজও আমি সম্পূর্ণ এবং সুস্পষ্ট করে জানি, এমন কথা বলতে পারি নে — অনুশাসন-আকারে তত্ত্ব-আকারে কোনো পুঁথিতে-লেখা ধর্ম সে তো নয়। সেই ধর্মকে জীবনের মর্মকোষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে, উদ্‌ঘাটিত করে, স্থির করে দাঁড় করিয়ে দেখা ও জানা আমার পক্ষে অসম্ভব — কিন্তু অলস শান্তি ও সৌন্দর্যরসভোগ যে সেই ধর্মের প্রধান লক্ষ্য বা উপাদান নয়, এ কথা নিশ্চয় জানি। আমি স্বীকার করি, আনন্দাদ্ধ্যেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে এবং আনন্দং প্রয়ন্তি অভিসংবিশন্তি — কিন্তু সেই আনন্দ দুঃখকে-বর্জন-করা আনন্দ নয়, দুঃখকে-আত্মসাৎ-করা আনন্দ। সেই আনন্দের যে মঙ্গলরূপ তা অমঙ্গলকে অতিক্রম করেই, তাকে ত্যাগ করে নয়, তার যে অখণ্ড অদ্বৈত রূপ তা সমস্ত বিভাগ ও বিরোধকে পরিপূর্ণ করে তুলে, তাকে অস্বীকার করে নয়।

অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো

সেই তো তোমার আলো।

সকল দ্বন্দ্ববিরোধমাঝে জাগ্রত যে ভালো

সেই তো তোমার ভালো।

পথের ধুলায় বক্ষ পেতে রয়েছে যেই গেহ