নটীর পূজা
বুঝি আজ হঠাৎ সাধ্বী হয়ে উঠেছে? যেদিন ভগবান বুদ্ধ অশোকবনে এসেছিলেন রাজপুরীর সকলেই তাঁকে দেখতে এল, একেও দয়া করে ডাকতে পাঠিয়েছিলেম। পাপিষ্ঠা এলই না। তবু আজ নাকি ভিক্ষু উপালি রাজবাড়িতে একমাত্র ওর হাতেই ভিক্ষা নিতে আসে, রাজকুমারীদের এড়িয়ে যায়। মূঢ়ে, রাজবংশের মেয়ে হয়ে তোরা এই ধর্মকে অভ্যর্থনা করতে বসেছিস, উচ্চ আসনকে ধুলায় টেনে ফেলবার এই ধর্ম। যেখানে রাজার প্রভাব ছিল সেখানে ভিক্ষুর প্রভাব হবে— একে ধর্ম বলিস তোরা আত্মঘাতিনীরা? উপালি তোকে কী মন্ত্র দিয়েছে উচ্চারণ কর্ দেখি নটী। দেখি কতবড়ো সাহস। পাপরসনায় পক্ষাঘাত হবে না?

শ্রীমতী। (করজোড়ে, উঠিয়া দাঁড়াইয়া)

ওঁ নমো বুদ্ধায় গুরবে
নমো ধর্মায় তারিণে
নমঃ সংঘায় মহত্তমায় নমঃ।

লোকেশ্বরী। ওঁ নমো বুদ্ধায় গুরবে— থাক্‌ থাক্‌, থাম্‌ থাম্‌।

শ্রীমতী। মদ্ধিতায় অনাথায় অনুকম্পায় যে বিভো—

লোকেশ্বরী। (বক্ষে করাঘাত করিয়া) ওরে অনাথা, অনাথা। শ্রীমতী একবার বলো তো, মহাকারুণিকো নাথো—

উভয়ে আবৃত্তি
মহাকারুণিকো নাথো হিতায় সব্বপাণিনং
পূরেত্বা পারমী সব্বা পত্তো সম্বোধিমুত্তমম্‌।

লোকেশ্বরী। হয়েছে, হয়েছে, থাক্‌ আর নয়। নমো বজ্রক্রোধডাকিন্যৈ।

অনুচরীর প্রবেশ

অনুচরী। মহারানী, এইদিকে আসুন নিভৃতে।

(জনান্তিকে) রাজকুমার চিত্র এসেছেন জননীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।

লোকেশ্বরী। কে বলে ধর্ম মিথ্যা। পুণ্যমন্ত্রের যেমনি উচ্চারণ অমনি গেল অমঙ্গল। ওরে বিশ্বাসহীনারা, তোরা আমার দুঃখ দেখে মনে মনে হেসেছিলি। মহাকারুণিকো নাথো- তাঁর করুণার কতবড়ো শক্তি। পাথর গলে যায় এই আমি তোদের সবাইকে বলে যাচ্ছি, পাব আবার পুত্রকে, পাব আবার সিংহাসন। যারা ভগবানকে অপমান করছে দেখব তাদের দর্প কতদিন থাকে।

বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি
ধম্মং সরণং গচ্ছামি
সংঘং সরণং গচ্ছামি।
[ বলিতে বলিতে অনুচরীসহ প্রস্থান

রত্নাবলী। মল্লিকা, হাওয়া আবার কোন্‌দিক থেকে বইল?

মল্লিকা। আজকাল আকাশ জুড়ে এ-যে পাগলামির হাওয়া, এর কি গতির স্থিরতা আছে? হঠাৎ কাকে কোন্ দিকে নিয়ে যায় কেউ বলতে পারে না। সেই-যে কলন্দক আজ চল্লিশ বছর জুয়ো খেলে কাটালে, সে হঠাৎ শুনি নাকি ওদের অর্হৎ হয়ে উঠেছে। আবার নন্দিবর্ধন, যজ্ঞে যে সর্বস্ব দিতে পণ করলে আজ ব্রাহ্মণ দেখলে সে মারতে যায়।

রত্নাবলী। তাহলে রাজকুমার চিত্র ফিরে এলেন।