রক্তকরবী

সর্দার। লক্ষণ দেখে আমি আগেই সব প্রস্তুত রেখেছি। কিন্তু হায় হায়, কী দুঃখ। আমাদের স্বর্ণপুরী যেরকম ঐশ্বর্যে ভরে উঠেছিল, এমন কোনোদিন হয় নি, ঠিক এই সময়টাতেই – আচ্ছা যাও, ভেবে দেখছি।

[ চিকিৎসকের প্রস্থান
মোড়লের প্রবেশ

মোড়ল। সর্দারমহারাজ, ডেকেছেন? আমি ঞ পাড়ার মোড়ল।

সর্দার। তুমিই তো তিনশো একুশ?

মোড়ল। প্রভুর কী স্মরণশক্তি। আমার মতো অভাজনকেও ভোলেন না।

সর্দার। দেশ থেকে আমার স্ত্রী আসছে। তোমাদের পাড়ার কাছে ডাক বদল হবে, শীঘ্র এখানে পৌঁছিয়ে দেওয়া চাই।

মোড়ল। পাড়ায় গোরুর মড়ক, গাড়ি টানবার মতো বলদের অভাব। তা হোক, খোদাইকরদের লাগিয়ে দেওয়া যাবে।

সর্দার। কোথায় যেতে হবে জান তো? বাগানবাড়িতে, যেখানে সর্দারদের ভোজ।

মোড়ল। যাচ্ছি, কিন্তু একটা কথা বলে দিয়ে যাই। একটু কান দেবেন। ঐ-যে ৬৯ঙ, লোকে যাকে বিশুপাগল বলে, ওর পাগলামিটাকে শোধন করবার সময় এসেছে।

সর্দার। কেন। তোমাদের ’পরে উৎপাত করে নাকি।

মোড়ল। মুখের কথায় নয়, ভাবে ভঙ্গিতে।

সর্দার। আর ভাবনা নেই। বুঝেছ?

মোড়ল। তাই নাকি! তা হলে ভালো। আর-একটা কথা, ঐ-যে ৪৭ফ, ৬৯ঙর সঙ্গে ওর কিছু বেশি মেশামেশি।

সর্দার। সেটা লক্ষ্য করেছি।

মোড়ল। প্রভুর লক্ষ্য ঠিকই আছে। তবু নানান দিকে দৃষ্টি রাখতে হয় নাকি— দুই-একটা ফস্‌কিয়ে যেতেও পারে। এই দেখুন-না, আমাদের ৯৫ – গ্রামসম্পর্কে আমার পিসশ্বশুর— পাঁজরের হাড় ক’খানা দিয়ে সর্দারমহারাজের ঝাড়ুবর্দারের খড়ম বানিয়ে দিতে প্রস্তুত, প্রভুভক্তি দেখে স্বয়ং তার সহধর্মিণী লজ্জায় মাথা হেঁট করে অথচ আজ পর্যন্ত—

সর্দার। তার নাম বড়ো-খাতায় উঠেছে।

মোড়ল। যাক, সার্থক হল এতকালের সেবা। খবরটা তাকে সাবধানে শোনাতে হবে, তার আবার মৃগীরোগ আছে, কী জানি হঠাৎ —

সর্দার। আচ্ছা, সে হবে, তুমি যাও শিগ্‌গির।

মোড়ল। আর-একজন মানুষের কথা বলবার আছে— সে যদিচ আমার আপন শালা, তার মা মরে গেলে আমার স্ত্রী তাকে নিজের হাতে মানুষ করেছে, তবুও যখন মনিবের নিমক—

সর্দার। তার কথা কাল হবে, তুমি দৌড়ে চলে যাও।

মোড়ল। মেজো সর্দারবাহাদুর ঐ আসছেন। ওঁকে আমার হয়ে দুটো কথা বলবেন। আমার উপর ওঁর ভালো নজর নেই। আমার বিশ্বাস প্রভুদের মহলে ৬৯ঙর যখন যাওয়া-আসা ছিল, তখনই সে আমার নামে—

সর্দার। না না, কোনোদিন তোমার নাম করতেও তাকে শুনি নি।

মোড়ল। সেই তো ওর চালাকি। যে মানুষ নামজাদা তার নাম চাপা দিয়েই তো তাকে মারতে হয়। কৌশলে ইশারায়